ডেঙ্গুরবাহক এডিস ইজিপ্টি মশার সম্ভাব্য প্রজননস্থল নিয়ে সচেতনতা বাড়লেও তৈরি হয়েছে কিছু বিভ্রান্তিও। এর কারণ অজ্ঞতা বা গুজব। ডেঙ্গু-মশা ছড়ানোর ভয়ে বাড়ি, ছাদ ও বারান্দার টবের গাছ কেটে ফেলা, এমনকি সম্প্রতি জনপ্রিয় হওয়া ছাদবাগান করাও বন্ধ করে দিচ্ছেন শহুরে বাসিন্দারা। আর নার্সারিগুলোতেও গাছ বেচা-বিক্রি কমার তথ্যও মিলছে অহরহ।
অবাক করা ঘটনা হলো- নগর কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু-প্রতিরোধে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করায় মামলা ও জরিমানার আতঙ্কে ভাড়াটিয়াদের জোরপূর্বক ছাদ বা বারান্দায় রাখা টবের গাছ সড়িয়ে নিতে বাধ্য করছেন অনেক বাড়িওয়ালা। আবার কৌশলে ছাদ বাগানের গাছ উপড়ে ফেলা বা কেটে ফেলার মতো তথ্যও মিলছে। পাশাপাশি ফ্ল্যাট বাড়িগুলোতেও ওনার্স এসোসিয়েশনের অতি উৎসাহী সদস্যরাও অজ্ঞতাবশত সবুজায়ন ধ্বংসে মেতে উঠেছেন, যা শহরের পরিবেশ-প্রতিবেশের জন্য আরেক হুমকি বলে মনে করি।
কী করলে বারান্দা বা ছাদবাগান ডেঙ্গু-মশামুক্ত রেখে সবুজায়ন টিকিয়ে রাখা সম্ভব, তা নিয়েই আজকের লেখা…
প্রথমত, সঠিক পদ্ধতিতে রোপণ করলে ছাদ, বারান্দা বা ঘরের ভেতর রাখা কোন গাছই ডেঙ্গু মশার বংশ বিস্তারে সহায়ক নয়। কারণ জীবিত গাছের টবে কোনভাবেই বেশিক্ষণ পানি জমে থাকার সুযোগ নেই। এমন টবে পানি দেয়ার সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই ঘন্টার মধ্যেই মাটি পানি শুষে নিতে পারে। একটি সুস্থ গাছ শিকড়ের সাহায্যে পরবর্তীতে সেই পানি ক্রমান্বয়ে মাটি থেকে গ্রহণ করে নেয়।
বৃষ্টি বা অন্য কোন কারণে টবে মাত্রাতিরিক্ত পানি জমে গেলেও তা টবের তলায় থাকা পানি নিষ্কাশনের ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। আর ছিদ্র দিয়ে নিষ্কাশিত পানি বালি কাদা মিশ্রিত থাকে, যা ডেঙ্গু প্রজননে কোনভাবেই সহায়ক নয়।
প্রাকৃতিকভাবে মশা প্রতিরোধে কিছু গাছও আছে। যেমন- পুদিনা, তুলসি, গাঁদা ফুল, রসুন, লেমনগ্রাস, রোজমেরি, লেভেন্ডারের মতো গাছ মশা-প্রতিরোধীর ভূমিকা রাখে। ফলে এসব গাছ ছাদে কিংবা বারান্দায় রাখলেও মশা মুক্ত থাকা যাবে।
ছাদ বাগানের গাছগুলো নিয়মিত যত্ন ও পরিচর্যার নেয়া হয়। প্রতিদিন পানি সেচ, আগাছা পরিস্কার, নিড়ানো, বালাই দমনসহ এমন নানা বিষয় বাগান মালিক নিজেই বা নিয়োজিত মালি দ্বারা তত্ত্বাবধান করে থাকেন। এ ক্ষেত্রেও টব বা গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকার সুযোগ থাকে না। আর ছাদবাগানের পোকামাকড় দমনে প্রায়ই কীটনাশক স্প্রে করা হয়, যা মশা বা অন্যান্য ক্ষতিকর মাকড়ের বিস্তার রোধ করতে সহায়তা করে।
তবে কিছু অসতর্কতার কারণে টব বা গাছের গোড়ায় দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পানি জমে থাকতে পারে। যেমন- প্রতিদিন গাছে পানি দেয়ার ফলে ক্রমেই টবের মাটির স্তর নিচে নেমে যায়। ফলে বর্ষা মৌসুমে টবের উপরিভাগে অতিরিক্ত পানি জমার সম্ভাবনা থাকে। তবে মাটি দিয়ে সেগুলো পূর্ণ করে দিলেই পানি জমার সুযোগ আর থাকে না।
অনেকেই ঘর সাজাতে টবে মাটির পরিবর্তে পানিতেও সৌভাবর্ধিত গাছগুলো সাজিয়ে রাখেন। এক্ষেত্রে স্কচটেপ দিয়ে টবের মুখটি আটকে দিলেই কোনোভাবেই মশা জন্মানোর সুযোগ থাকবে না।
গাছে পানি দেয়ার সময় পরিমিত হারে পানি সেচ দেয়া উচিত, যাতে ৩০ মিনিটের মধ্যেই মাটি তা শুষে নিতে পারে। এতে টবের উপরিভাগে পানি জমবে না। এছাড়া টবের উপরিভাগে কোকোডাস্ট বা নারিকেলের খোসা বা কাঠের গুড়ো দিলে তা অতিরিক্ত পানি ধরে রাখতে পারে। ফলে টবে পানি জমতে পারেনা।
কিছুদিন পরপর টবের তলার পানি নিষ্কাশনের ছিদ্রগুলো পরখ করে নেয়া উচিত। যদি ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে তা আবার সচল করে দেয়া উচিত। এতে টবের তলানিতে জমে থাকা পানি সহজেই বেরিয়ে যাবে।
সম্ভব হলে চারা রোপণের সময়ই টবের নিচে অন্তত তিন থেকে পাঁচটি ছিদ্র করে নিতে পারেন। টবের মাটি প্রস্তুত করার সময়ও কম্পোস্ট, কোকোডাস্ট বা কাঠের গুড়ো মিশিয়ে নেয়া যায়। এতে টবের উপরিভাগের পানি দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারে। টবে পানি জমে থাকলে শুধু মশাই নয়, গোড়া পঁচে মারাও যেতে পারে গাছ।
লেখক: ছাদ বাগান উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা, গ্রিন সেভার্স নার্সারি, বাংলাদেশ