
ঢাকা, বাংলাদেশ: মানুষের কর্মকাণ্ডে গেল ৫০ বছরে পৃথিবীর বন্যপ্রাণীর সংখ্যা গড়ে ৭৩ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছে ‘দ্য লিভিং প্লানেট রিপোর্ট’। বিশ্বজুড়ে বন্যপ্রাণীর এই ব্যাপক হ্রাসকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে আখ্যা দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার (ডব্লিউডব্লিউএফ)।
লিভিং প্ল্যানেট ইনডেক্সের তথ্যমতে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চলের হাতি থেকে শুরু করে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের হকসবিল কচ্ছপ—সব প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। গত পাঁচ দশকে ৫ হাজারের বেশি পাখি, স্তন্যপায়ী, উভচর, সরীসৃপ এবং মাছের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে বিশ্বের ৬০ শতাংশ গোলাপী ডলফিনের বিলুপ্তি দেখা গেছে।
গবেষণায়, দূষণ, খনি, এবং মানবিক অস্থিরতাকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সংরক্ষণ উদ্যোগের ফলে পূর্ব আফ্রিকার ভিরুঙ্গা পর্বতমালায় পাহাড়ি গরিলার সংখ্যা ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বছরে ৩ শতাংশ করে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডব্লিউডব্লিউএফ যুক্তরাজ্যের প্রধান তানিয়া স্টিল জানান, আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে অনেক বাস্তুসংস্থান ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আমাজন থেকে প্রবাল প্রাচীর পর্যন্ত অনেক অঞ্চলে ‘বিপজ্জনক টিপিং পয়েন্ট’ অতিক্রমের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা ফেরাতে আর সহজ হবে না।

রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টম অলিভার এই প্রতিবেদনের অংশ না হলেও তার মতে, অন্যান্য প্রাণীর মতো পোকা-মাকড় কমে যাওয়ার হারও উদ্বেগজনক। সবমিলে, বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তির যে ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে তা উদ্বেগজনক।
প্রতিবেদনে বন্যজীবনের ওপর বড় হুমকি হিসেবে আবাসস্থল হ্রাস, অতিরিক্ত শোষণ, আক্রমণাত্মক প্রজাতি, রোগ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দূষণকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ডব্লিউডব্লিউএফের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা মাইক ব্যারেট বলেন, মানুষের খাদ্য উৎপাদন ও ভোগের কারণে ক্রমেই আবাসস্থল হারিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দয়া করে প্রকৃতি ধ্বংস নিয়ে শুধু শোক প্রকাশ করেই বসে থাকবেন না। এটি মানব সভ্যতার জন্য মৌলিক হুমকি।’
জুলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডনের ভ্যালেন্টিনা মার্কনি জানান, প্রকৃতির বর্তমান অবস্থা অনিশ্চিত হলেও দ্রুত ও সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নত করা সম্ভব।
কলম্বিয়ার কালিতে জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে মিলিত হচ্ছেন বিশ্ব নেতারা। যেখানে প্রকৃতি পুনরুদ্ধারের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। ২০২২ সালের জাতিসংঘের চুক্তি অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীর ৩০ শতাংশ অঞ্চল সংরক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে।