লকডাউনজুড়ে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শুনতে পাচ্ছি না। ঘরের কাছের কড়ই গাছেও দেখা যাচ্ছে না। অথচ প্রতিদিন ভোরে তাদের চিৎকার কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙতো। প্রতিদিন সকালে রান্নাঘর লাগোয়া জানালার ধারের জায়গাটায় বিস্কিটের গুঁড়ো, বাসিভাত, মুড়ি দেওয়া হতো। কোন দিন বিলম্ব হলেই চলতো তাদের মিছিল শ্লোগান জানালার ধারের কড়ই গাছে বসে। কত ধরনের শব্দবাণ তারা ছুড়ে দিতো তা ভাষায় বুঝানো যাবে না।
আজ ক’দিন হয় তারা আসে না। একদিন, দু’দিন, তিনদিন এবং এভাবে তেরো চৌদ্দদিন পার করে প্রায় এক থেকে দেড়মাস আর পাখিগুলো আসছে না। কেন আসছে না বুঝতে পারছিলাম না। আচ্ছা পশু-পাখিদের মধ্যেও কী ষষ্ঠইন্দ্রিয় কাজ করে? মানুষের বিপদের বিষয় কী তারা আঁচ করতে পারে?
মনে হয় সৃষ্টিকর্তা তাঁর এই সৃষ্টি অবোধ প্রাণীদের মধ্যেও নিশ্চয় বোধশক্তি দিয়েছেন। তাদেরও বেঁচে থাকার স্বাদ আছে। হয়তো রবীন্দ্রনাথের ভাষায় তারা বলতে পারছে না- ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে’। তারা হয়তো আরো সুন্দর আরো অর্থবোধক বাক্য সৃষ্টির ক্ষমতা রাখে। যা আমরা বুঝি না। পাখি নিয়ে যারা কাজ করেন তাঁরা হয়তো বুঝতে পারেন। কিন্ত আমার মনের মধ্যে এক ধরণের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
পৃথিবীজুড়ে শুরু হয়েছে কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস। দুনিয়ায় জুড়ে হৈচৈ চলছে। মানুষ মরছে দেশে বিদেশে। স্কুল-কলেজ, অফিস চারিদিকে সব বন্ধ। ঘরবন্দি মানুষ। এই বন্ধকে বলা হয়েছে লকডাউন। বাংলাদেশে গত ২০২০ সালের মার্চ থেকে সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুরু হলো গৃহবন্দি জীবন। তখন ভেবেছিলাম পাখিদের নিয়ে সময়টা কাটবে ভালো। এগুলো পোষা নয়, সঙ্গে আছে কাঠবিড়ালিও। পাখিরা ভদ্র তারা জানালার পাশে বসে খাবার খেয়ে যায়।
কাঠবিড়ালি সুযোগ পেলে ঘরে ঢুকে, রান্না ঘরে রাখা কাঁচা সবজি নিয়ে যায়, ডাইনিং টেবিল থেকে কলা, আপেল নিয়ে এক লাফে কড়ই গাছে। আমার খুব মজা লাগে। এক্কেবারে প্রকৃতির সঙ্গে রয়েছি। কিন্ত কিছুদিন ধরে পাখিদের না আসা নিয়ে বেশ চিন্তা। কেন আসছে না। কাঠবিড়ালিও না। হয়তো তারা বুঝেছে মানুষ গোত্রের মধ্যে মহামারি লেগেছে। এখন একটু দূরে থাকাই ভালো।
আমার বাচ্চাটাও জানতে চাইলো, “বাবা তোমার পাখিরা কেন আসছে না।” বললাম- তুমি যে ওদের তাড়া করো তাই রাগ করেছে। সে বলেছে, “আমি কেবল কাঠ বিড়ালটাকে তাড়াই। ও এখানে খেতে এসে হাগু করে দেয়। পাখিদের তো কিছু করি না।”
আমার বাসার সামনে বড় খোলা একটা জায়গা রয়েছে। বেশ কয়েকটি আমের গাছ, নারিকেল, রেইনট্রি, ডুমুর গাছের সঙ্গে বিভিন্ন ধরেনর বুনো গাছ লতায় ভরা। বুনো কচু, বেতের লতানো গাছও রয়েছে। মোটমুটি ভালো একটি জঙ্গলা জায়গা। এর পেছনে কচুরিপানা ভর্তি একটি ডোবা, সেটির ধারেই বাঁশের ঝোপঝাড়।