কপ-২৯ সম্মেলনের আগে ঢাকায় তরুণদের প্রস্তাবনা

ছবি: বেঙ্গল ডিসকাভার

ঢাকা, বাংলাদেশ: আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৯)-এর আগে বাংলাদেশের তরুণরা জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় এবং ক্ষতিপূরণের আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছেন। এবারের কপ-২৯ সম্মেলনে জলবায়ু কূটনীতি, জলবায়ু নীতি সংক্রান্ত আলোচনা এবং জলবায়ু দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।

বুধবার ঢাকার হোটেল সারিনায় অনুষ্ঠিত লোকাল কনফারেন্স অফ ইয়ুথ (এলকোই)-২০২৪ সম্মেলনে এসব দাবি ও প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এর আগে গত ৬ থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত গুলশানে গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশে তরুণ জলবায়ুকর্মীদের নিয়ে এক আবাসিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মশালাটি আয়োজন করে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন), যেখানে তরুণ জলবায়ুকর্মী, পেশাজীবী, গবেষক ও নীতিনির্ধারকরা পারস্পরিক আলোচনায় অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদ জানান, বাকুতে কপ-২৯ সম্মেলনে সরকারি ডেলিগেশন দলে তরুণ জলবায়ুকর্মীদের যুক্ত করা হবে।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের নতুন প্রেক্ষাপটে তরুণরা অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় তাদের উদ্যোগ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে, বিশেষ করে কপ-২৯-এ, তরুণদের অংশগ্রহণ জরুরি।”

ড. আব্দুল হামিদ জানান, জলবায়ু কূটনীতি ও নেগোশিয়েশন বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি করা হবে।

অনুষ্ঠানটি মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথমটি ছিল ইয়াং নেগোশিয়েটর প্রোগ্রাম অন ক্লাইমেট ডিপ্লোমেসি, যা ৬-৮ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ২৬ জন তরুণ নেতা ও জলবায়ুকর্মী জলবায়ু কূটনীতি, নীতি প্রণয়ন, এবং প্রচার কৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ পান।

দ্বিতীয় অংশটি ছিল ৯ অক্টোবর সারিনায় অনুষ্ঠিত একদিনের সম্মেলন, যেখানে ৫০ জন তরুণ জলবায়ু প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ প্রায় ১০০ জনের উপস্থিতি ছিল। প্লেনারি সেশন, প্যানেল আলোচনা এবং তরুণদের দ্বারা উত্থাপিত বিভিন্ন প্রস্তাবনা সম্মেলনটিকে প্রাণবন্ত করে তোলে। সম্মেলনের “স্টোরিজ অব চেঞ্জ” অংশে ১৩টি তরুণ সংগঠন তাদের পরিবেশ সুরক্ষায় গৃহীত উদ্যোগগুলো তুলে ধরে।

আয়োজকরা জানান, কপ-২৯ এবং কোওয়াই-১৯ সম্মেলনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই সম্মেলনটি আয়োজিত হয়েছে, যেন তরুণরা আন্তর্জাতিক জলবায়ু আলোচনায় যৌক্তিক পদক্ষেপ নিতে পারেন। এলকোই প্রতিনিধি দল থেকে তরুণদের তৈরি “ইয়ুথ স্টেটমেন্ট” পরিবেশ অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে, যেখানে তরুণদের জলবায়ু দাবিগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এবারের এলকোই বাংলাদেশ সম্মেলনটির মাধ্যমে তরুণ নেতৃত্বের বিকাশে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

এলকোই-২০২৪-এর কৌশলগত সহযোগী হিসেবে ছিল জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), অ্যাকশনএইড, ভিএসও বাংলাদেশ, ইয়ুথ এমপাওয়ারমেন্ট ইন ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যাটফর্ম (ওয়াইইক্যাপ) এবং সেন্টার ফর ক্লাইমেট জাস্টিস বাংলাদেশ।

আয়োজকরা জানান, তরুণ নেতাদের আলোচনাগত ও কূটনৈতিক দক্ষতা তৈরির জন্য “ইয়াং নেগোশিয়েটর প্রোগ্রাম অন ক্লাইমেট ডিপ্লোমেসি” এবারের সম্মেলনের অন্যতম মূল অংশ ছিল। এছাড়া, জলবায়ু অর্থনীতি এবং ন্যায়বিচার সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ওপরও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

এই বছর জলবায়ু আন্দোলনে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে, নারীদের অংশগ্রহণ ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে তৈরি করা বাংলাদেশ ইয়ুথ স্টেটমেন্ট ২০২৪ থেকে কিছু প্রস্তাবনা কপ-২৯ এবং কোওয়াই-১৯ সম্মেলনে আলোচনা করা হবে, যা বাংলাদেশের যুব সমাজের উল্লেখযোগ্য অবদান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

সম্মেলনে ভিএসও বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর খাবিরুল হক কামাল, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মামুনুর রশীদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদ, এবং গেইনের কান্ট্রি ডিরেক্টর রুদাবা খন্দকার বক্তব্য রাখেন। বক্তারা অংশগ্রহণকারীদের উদ্ভাবনী শক্তি ও নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং তরুণদের বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

সমাপনী সেশনের প্রধান অতিথি, এডউইন কোয়েককোয়েক, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের গ্রিন ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ফার্স্ট কাউন্সিলর, বলেন, “জলবায়ু নেগোশিয়েশন হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেগোশিয়েশন, কারণ এর মাধ্যমে বিশ্বের প্রতি তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পায়।”