বাংলাদেশ থেকে সিংহ শাবক পাচার: উদ্ধার করলো ইন্টারপোল

ইন্টারপোলের উদ্ধারকৃত সিংহ শাবক। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সিংহ শাবকসহ ১০ হাজার বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-ইন্টারপোল। গেলো জুনে ২৬ দিনের এক সফল অভিযান শেষে গত বুধবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

বন্যপ্রাণী পাচাররোধে ইন্টারপোলের সমন্বয়ে বিশ্ব কাস্টমস সংস্থাসহ ১০৯টি দেশের যৌথ তৎপরতায় এই অভিযান পরিচালিত হয়।

ইন্টারপোল জানায়, উদ্ধার করা বন্যপ্রাণীদের মধ্যে রয়েছে- বাঘ, সিংহ, বাঘ-সিংহের শাবক, বুনো বিড়াল, পাখি, সরীসৃপ, সামুদ্রিক নানান প্রাণী যেমন-হাঙর, কচ্ছপসহ পাচারের জন্য জিম্মি হওয়া মোট দুই হাজার বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ উদ্ধার করে সংস্থাটি।

ইন্টারপোল জানায়, আরো উদ্ধারের মধ্যে রয়েছে ৩০টি বিড়াল, একটি সাদা বাঘের বাচ্চা; মেক্সিকোতে একটি পিকআপ ভ্যানে লুকানো ছিল এবং একটি সিংহের শাবক যেটি বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে পাচার হচ্ছিল।

এছাড়া চার হাজার কচ্ছপ, ১৮৫০টি পাখি এবং সরীসৃপ। আধা টন হাতির দাঁত এবং ৭০ ট্রাকের বেশি কাঠ জব্দ করে সংস্থাটি। বিশ্লেষকদের মতে, জব্দকৃত বন্যপ্রাণী ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মূল্য আট মিলিয়ন ডলারের বেশি।

ইন্টারপোল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৬০০’র বেশি নাগরিককে পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে চিহ্নিত করেছে, যারা সরাসরি পাচারের সঙ্গে জড়িত। আর ২৬ দিনের অভিযানে ২১জন স্পেনের ও তিনজন উরুগুয়ের নাগরিককে আটক করা হয়।

ইটালি,কাজাখাস্তান, হংকং, বাংলাদেশ, ব্রিটেন, মেক্সিকো, ইকুয়েডর, আফ্রিকা, আর্জেন্টিনা, নাইজেরিয়া, লাতিন আমেরিকা ও চীনের মতো দেশগুলোকে পাচারকারীদের অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আটকৃতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যেরভিত্তিতে সংস্থাটি জানায়, ঐতিহ্যবাহী চায়নিজ ওষুধ, সুগন্ধি, তেল, নামীদামী রেস্টুরেন্টে প্রাণীর মাংস বিক্রি, অলংকার, ভাষ্কর্য হিসেবে কালোবাজারে চড়া দামে বিক্রি করে থাকে পাচারকারীরা।

বিশ্ব কাস্টমস সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে ইন্টারপোল জানায়, নাইজেরিয়াতে আধা টন প্যাঙ্গোলিনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জব্দ করা হয়, যেগুলো এশিয়াতে পাচার হচ্ছিল। কারণ কালোবাজারে এই প্রাণীদের চামড়া ও মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

যা চীনা ঔষধ তৈরি ও ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় বিক্রি হয়, ফলে পাচাকারীরা কোটি ডলার ব্যবসা করে থাকে।

গেলো ফেব্রুয়ারিতে হংকংয়ে প্রায় আট মিলিয়ন ডলার মূল্যের প্যাঙ্গোলিনের চামড়া আটক করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করে ইন্টারপোল।

প্রাণীর চামড়া, হাড়, দাঁত দিয়েও বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস তৈরি হয়, তাই দামও আকাশচুম্বী।

এজন্য বহু প্রজতির গাছ এবং প্রাণী হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে, আর বিলুপ্তির পথে আরো অনেক প্রাণী।

প্রকৃতি সংরক্ষণে নিজ নিজ দেশের বন্যপ্রাণী ও বন সংরক্ষণে পদক্ষেপ নিতে বিভিন্ন দেশকে পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি ।

“সকল সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করে পাচারকারীদের ধরার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে ইন্টারপোল,” মন্তব্য করেন ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেজন সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট।

তিনি বলেন, ইন্টারপোল নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছে। এখন আটকৃতরা যে দেশের নাগরিক, সে দেশগুলোকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর আইনী পদক্ষেপ।

ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জেনারেল  জুরজেন স্টক বলেন,বন্যপ্রাণী পাচার শুধুমাত্র প্রকৃতির ক্ষতিই করছে না, বরং এটি সমাজে সহিংসতা,অর্থ পাচার এবং জালিয়াতির মতো ঘটনাও সৃষ্টি করছে।

এই অভিযানকে আন্তজার্তিক বন্যপ্রাণী পাচার চক্রের বিরুদ্ধে ‘কনক্রিট একশন’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।