প্রকৃতিতে শীতের বার্তা, তবে…

দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে গেল দুদিন ধরে ঢাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা আবহাওয়াকে বেশ শীতল করে তুলেছে। এটিকে প্রকৃতিতে শীতের বার্তা বলছেন আবহাওয়াবিদেরা। তবে চলতি বছরের তীব্র গরমের মৌসুমের পর প্রকৃতির এই শীতলতায় জনজীবনে ফিলেছে স্বস্তি।

চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে দেখা যায়, দিনভর গরম থাকলেও বিকাল থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে প্রকৃতি। নিচ্ছে শান্ত-নীরব রূপ। গেল কয়েকদিন দ্রুত ফুরিয়ে আসছে দিনও। ফসলের ক্ষেতসহ ঘাসে শিশির এঁকে দিচ্ছে শীতের চিহ্ন।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হওয়া বৃষ্টি সারাদেশে শীতকে দ্রুত নামিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। কারণ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থার কারণে শীত আসার আগে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সাধারণত প্রতিবছরই হয়ে থাকে। আর এই সময় সূর্য ধীরে ধীরে দক্ষিণে চলে যায়। তখন সমুদ্র উত্তপ্ত হয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তবে প্রকৃতিতে অবস্থার তৈরি হলে মেঘ আসে ও বৃষ্টিপাত হয়। আবার বৃষ্টির পর মেঘ কেটে যায়, আকাশও পরিষ্কার হয়ে যায়। আর শীতের পূর্বশর্তই হল পরিষ্কার আকাশ থাকতে হবে। এই বৃষ্টির পর হালকা শীত শীত অনুভূতি হতে পারে। অবশ্য উত্তরবঙ্গের জেলা দিনাজপুর, রংপুর, পঞ্চগড়সহ প্রান্তিক পর্যায়ে ইতোমধ্যে নামতে শুরু করেছে শীত।

আবহাওয়া অধিদদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী কয়েক দিনের ব্যাবধানে আবারও বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে চলতি মাসের শেষ দিকে আরেকটি নিম্নচাপ হতে পারে। তবে তা না হলেও প্রকৃতিগত তারতম্যের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। আর নভেম্বর মাসটা এভাবেই যাবে।

তবে এ বছর শীতের প্রভাব তেমন দেখা যাবে না: ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম, জলবায়ুবিদ, বুয়েট

আবহওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হয়েছে। এতে দেশের তাপমাত্র দুই থেকে চার ডিগ্রি পর্যন্ত কমেছে। আর এরমধ্য দিয়েই দেশে শীতের একটি আমেজ তৈরি হয়েছে। এমনিতেই আমাদের দেশে ডিসেম্বরে শীতকাল শুরু হয়ে থাকে। এখন মধ্য নভেম্বর। শীতকাল আসতেও তেমন বেশি সময় দেরিও নেই।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আগামী ৭২ ঘন্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ শনিবার দিনের তাপমাত্রা কমবে দুই থেকে তিন ডিগ্রি ও রাতের তাপমাত্রা কমবে এক থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন তাপমাত্র ছিল ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। আর দিনের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে।

তবে বুয়েটের জলবায়ুবিদ ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলছেন, ‘যে ঠাণ্ডা অনুভূতি হচ্ছে এটা পুরোপুরি শীতের বার্তা নয়।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বর্তমান আবহাওয়া পরিস্থিতিটা আসলে সাময়িক- স্থানীয় পরিস্থিতি মাত্র। এ পরিস্থিতি চলে গেলেও একেবারেই যে শীত হঠাৎ করে পড়বে তা না। কারণ এ বছর পৃথিবী উত্তপ্ত – এল-নিনো পরিস্থিতি চলছে। আর এ বছর অর্থাৎ ২০২৩ সাল যেহেতু সবচেয়ে উত্তপ্ত বৎসর হচ্ছে। গত জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর রেকর্ড ব্রেকিং গরমও পড়েছে। তাই নভেম্বর ও ডিসেম্বরে শীতটা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা কম। পাশাপাশি শীতের সময়টাও কমে আসতে পারে। সবমিলিয়ে এ বছর শীতের তেমন প্রভাব দেখা যাবে না।’