
ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ১০ জেলার নদ-নদীতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার উপরে। ফলে জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করছে সরকার।
শুক্রবার সচিবালয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির বৈঠক শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বন্যার আশঙ্কা থাকায় মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী কয়েকদিন ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে, এতে পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে। ভারতে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে যমুনা নদীতে পানি আরো বাড়বে। পাশাপাশি বিহারে গঙ্গার পানি বাড়ায় বালাদেশে পদ্মা অববাহিকায় বন্যা দেখা দিতে পারে।
“মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে,” জানান প্রতিমন্ত্রী। বলেন, জামালপুরে ভাঙনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, লালমনিহাটে তিস্তা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এগুলো মোকাবেলায় কাজ শুরু হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার এবং নীলফামারী জেলায় বন্যা পরিস্থির অবনতি হয়েছে।
দেশের নদনদীগুলোর ৬২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেসব পয়েন্টে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ৫৫১টি সেন্টারকে ঝুঁকিমুক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে, উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
দুর্গত জেলাগুলোতে সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিকটন চাল এবং ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং দুই কোটি ৯৩ লাখ নগদ টাকা পাঠানো হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে এসব জেলায় ৫০০টি করে তাঁবু এবং মেডিকেল টিমের পৌঁছে যাবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

সিভিল সার্জনদের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়েছে যাতে পানিবাহিত রোগ বিস্তার রোধ করা যায়। খাদ্যগুদামের কর্মরতদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
“আমরা আশা করি, এই বন্যায় আমরা মানুষের জীবন রক্ষা করতে তো পারবই, গবাদিপশু এবং খাদ্যশষ্যেরও নিরাপত্তা দিতে পারব,” আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রতিমন্ত্রী।
ত্রাণ সচিব শাহ কামাল বলেন, যেসব জেলা দুর্গত হতে পারে সেগুলোর পাশাপাশি অন্য জেলাগুলোতেও সমান প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় দুই হাজার প্যাকেট করে মোট ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে। একটি প্যাকেটে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, তেল, আটা, মসুরের ডাল, শিশু খাবারসহ একটি পরিবারের সাত দিনের খাবার রয়েছে।
“এখন পর্যন্ত দুই কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং দুই দফায় সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টন চাল বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে,” জানান শাহ কামাল। “কোনো জেলা প্রশাসক চাহিদা পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে চাল দেয়া হবে,” উল্লেখ করেন তিনি।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিকেল টিম গঠন করেছে, প্রচুর পরিমাণে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রস্তুত রেখেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

“রোববার থেকে ডিসি সম্মেলনে অংশ নিতে সব ডিসি ঢাকায় থাকবেন। ভারপ্রাপ্ত ডিসিদের নিজ কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দায়িত্ব পালনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে,” জানান প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী জানান, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেই নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
বন্যাকবলিত জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে সব ধরনের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।