আমাজনে অগ্নিকাণ্ড ‘বৈশ্বিক-সংকট’: হুমকিতে বন্যপ্রাণীরা!

ছবি: সংগৃহীত

আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর “ফুসফুস” ব্রাজিলের আমাজন বন। দাবানলটি ছাড়িয়েছে অতীতের সব রেকর্ড। পুড়তে থাকা বনাঞ্চলটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মহলও। সংকট মোকাবেলায় আসন্ন জি-সেভেন সম্মেলনে আমাজনে অগ্নিকাণ্ড আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

শুক্রবার এক টুইট বার্তায় ম্যাক্রোঁ বলেন, “আমাদের ঘর জ্বলছে। বিশ্বের ২০ ভাগ অক্সিজেন যোগান দেয় এই বনাঞ্চল, তাই এটি এখন আন্তর্জাতিক সংকট।”

অবশ্য ফরাসি প্রেসিডেন্টের এ মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনেরো। পাল্টা অভিযোগে বলেন, ম্যাক্রোঁ “রাজনৈতিক সুবিধা লাভের” জন্য আমাজনের অগ্নিকাণ্ডকে ব্যবহার করছেন।

ছবি: সংগৃহীত

জাইর বোলসোনেরো বলেন, ব্রাজিল জি-সেভেন সম্মেলনে অংশগ্রহণ না করায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা “ভুল স্থানে উপনিবেশবাদী মানসিকতা” উন্মোচিত করবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কমিশন এক বিবৃতিতে বলে, “ব্রাজিলের বনাঞ্চলে যে আগুন জ্বলছে তা গভীর উদ্বেগজনক। বনাঞ্চল আমাদের ফুসফুস এবং জীবন রক্ষা ব্যবস্থা।”

এদিকে আগুনে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রাজিলের ‍উত্তরের রনডোনিয়া অঙ্গরাজ্য। সেখানকার আদিবাসী নেতারা জানান, বনে আগুন লাগার পর বন্যপ্রাণীরা প্রাণভয়ে বন থেকে ছুটে বেরিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা আমাজন বনাঞ্চলে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়া আগুনের ছবি প্রকাশের পর রাজনীতিবীদ থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রের তারকাসহ সাধারণ মানুষ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

আগুনে শুধু ব্রাজিলকেই প্রভাবিত করছে না, দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশ- ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া এবং কলম্বিয়াও মোকাবেলা করছে আমাজনের দাবানল মোকাবেলা করছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “#PrayForAmazon” চালু হয়েছে।

স্যাটেলাইট তথ্য বিশ্লেষণ করে ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইনপে জানায়, চলতি বছর প্রথম আট মাসে ব্রাজিল জুড়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৫ শতাংশ বেশি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের বেশিরভাগই হয়েছে আমাজন অঞ্চলে।

পরিবেশবাদীরা এজন্য আমাজন নিয়ে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনেরো সরকারের নীতিকে দায়ী করছেন। কট্টর ডানপন্থি এ প্রেসিডেন্ট বন উজাড়ে কাঠুরে ও কৃষকদের উৎসাহিত করছেন বলেও অভিযোগ তাদের।

কারিপুনা আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতা আদ্রিয়ানো কারিপুনা বলেন, “অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বন্যপ্রাণী আমাদের চোখে পড়ছে। বন ধোঁয়ায় ঢাকা পড়েছে, আকাশ অন্ধকার হয়ে গেছে। ধোঁয়ার ঝাঁজে আমাদের চোখে জ্বলুনি হচ্ছে এবং চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে।”

আমাজনে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের জন্য প্রেসিডেন্ট বোলসোনেরো প্রথমে এনজিওকে দায়ী করলেও তার ওই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। পরে নিজ অবস্থান থেকে সরে এসে বৃহস্পতিবার বলেন,  “কৃষকরাও বনে আগুন দিতে পারে।”