
আনুমানিক ৪৫ কোটি বছর ধরে সৌরজগতের গ্রহগুলোকে আলো দিয়ে আসছে সূর্য। তবে পৃথিবীতে সূর্যের স্বাভাবিক সময়ে সরবরাহ করা তাপমাত্রা এখন অনেক কমে গেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা-নাসা। পৃথিবীর প্রতি সূর্যের কার্যকলাপ নাটকীয়ভাবে হ্রাস পাওয়ার কারণকে সূর্যের ‘অবসরকাল’ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
সূর্যের এবারের অবসরকালকে ‘গ্র্যান্ড সোলার মিনিমাম’ নাম দিয়েছে নাসার বিজ্ঞানীরা। তারা জানান, সৌরজগতের গ্রহগুলো নিজ নিজ কক্ষপথে স্থির থেকে আবর্তন করার ক্ষেত্রে মূল শক্তির যোগান আসে সূর্য থেকে। সূর্যের পর্যাপ্ত আলোকরশ্মি আর উষ্ণতার কারণেই পৃথিবীতে জীবন ধারনের উপযোগী উপকরণ ও পরিবেশ সৃষ্টি হতে পেরেছে।
আকাশগঙ্গার শতকরা ৮৫ ভাগ তারার চেয়ে সূর্যের উজ্জ্বলতা বেশি হলেও এই নক্ষত্র সবসময় একইভাবে কাজ করে না। কখনো এর সক্রিয়তা বাড়তে বাড়তে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, আবার কখনো তা কমতে কমতে চলে আসে অবসরকালে। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১১ বছর পর পর সূর্যের সক্রিয়তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়।
বিশ্বখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. টনি ফিলিপস বলেন, আমরা এমন গভীরতম সময়ের ভেতরে প্রবেশ করতে যাচ্ছি, যে সময়ে সূর্যের আলো কার্যত অদৃশ্য হয়ে যাবে। সানস্পট গণনায় বোঝা যাচ্ছে এটি বিগত শতাব্দীর সবচেয়ে গভীরতম অবস্থানে রয়েছে। সূর্যের চৌম্বকীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর মানে হলো সৌরজগতে অতিরিক্ত মহাজাগতিক শক্তির প্রবেশের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
তবে বিজ্ঞানীরা জানান, অবসরকালে সূর্য একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় না। সবচে সক্রিয় থাকাকালীন সময়ে সূর্যের বহিরাবরণে অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি গাঢ় দাগ দেখা যায়। সূর্য থেকে শক্তির বিচ্ছুরণও হয় অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি। কিন্তু সোলার মিনিমামের সময় সূর্যের কার্যক্রম অনেকাংশেই শান্ত হয়ে আসে। তাই সূর্যের বহিরাবরণে অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি গাঢ় দাগও কমে যায়। ফলে কমে যায় শক্তির বিচ্ছুরণও। এজন্য অবশ্য কিছু সমস্যা হয়।
সূর্যের এ অবসরকালে সৌরজগতে অতিরিক্ত মহাজাগতিক রশ্মি প্রবেশ করার আশঙ্কা থাকে। যা নভোচারী ও মেরু-অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক। পাশপাশি পৃথিবীর ওপরের বায়ুমণ্ডলের বৈদ্যুতিক-রসায়নকে প্রভাবিত করে এবং বজ্রপাতও বাড়াবে। কিন্তু এটি পৃথিবীর দৈনন্দিন জীবনে খুব একটা প্রভাব ফেলে না।
এর আগে ১৬৫০ সাল থেকে ১৭১৫ সালের মধ্যে কোনো একসময় এবার মতোই অবসরকাল এসেছিল সূর্য। এর প্রভাবে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে সামান্য বরফযুগ ফিরে এসেছিল। সূর্যের এ লকডাউনে যাবার ঘটনায় ’ডাল্টন মিনিমাম’ এর পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা একদল বিজ্ঞানীর।
১৭৯০ এবং ১৮৩০ সালের মধ্যে সূর্যের মিনিমাম সোলারের কারণে তীব্র শীত পড়েছিল পৃথিবীতে। ১৮১৫ সালের ১০ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার তামবোরা পর্বতশৃঙ্গে দুই হাজার বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্নৎপাতের ঘটনা ঘটে। এতে মুহুর্তেই অন্তত ৭১ হাজার মানুষ মারা যায়। পরের বছর ১৮১৬ সালে বিশ্বের অনেক দেশেই গ্রীষ্মকাল দেখা যায়নি। এমনকি জুলাইয়ের গরমের দিনেও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে তুষারপাত হয়। তবে এবার এমনটা হবে না বলে আশাবাদী গবেষকরা।