সুপার সাইক্লোন আম্পান ভয়াবহ তান্ডব চালিয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। বরাবরের মতো এবারও মানুষসহ বিশাল উপকূলকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। এতে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বনবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বনের বেশিরভাগ অংশ প্লাবিত হয়েছে। এতে লবণাক্ত হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের মিঠা পানির জলাশয়গুলো। ফলে এই অঞ্চলে আশেপাশে বসবাসরত মানুষ এবং বনের প্রাণীদের পান উপযোগী জলের অভাব হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বনবিভাগের কর্মকর্তারা।
ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সুন্দরবনের বেশিরভাগ জমি দুই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। বনের আশপাশের এলাকার জলাশয়ের পানিতেও মিশেছে সাগরের নোনাপানি। ঝড়ের পর বিভিন্ন জায়গার আবহাওয়া এখনও রুক্ষ। সুন্দরবনের পূর্ব বনবিভাগের তুলনায় পশ্চিম বনবিভাগে এ রুক্ষতা এখনো বিদ্যমান। আর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বন সংরক্ষণে নিয়োজিতরা বনের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারায় ধ্বংসের পরিমাণ এখনও আন্দাজ করা যাচ্ছে না।
খুলনা বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন বলেন, ধ্বংসের প্রকৃতি ও আকার নির্ধারণ করার জন্য আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। আগামী তিনদিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। তবে জলাশয়ের পানির লবণাক্ততা কাটাতে এবারের বর্ষায় বৃষ্টি থেকে পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন বলিরুল আল মামুন। ”অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি মিঠাপানির জলাশয়গুলো নোনাপানি মুক্ত হতে তিন থেকে চার বছর সময় লেগে যেতে পারে,” উল্লেখ করেন বশিরুল আল মামুন।
বাগেরহাটের সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, ”এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বন্যপ্রাণীর খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি, তবে গাছপালা উপড়ে গেছে। এখানে সবচে বেশি ক্ষতি হয়েছে মিঠা পানির জলাশয়গুলো। লবণাক্ত পানিতে সেগুলো প্লাবিত হয়েছে।”
সুন্দরবনের ক্ষতির পাশাপাশি তান্ডব থেমে ছিলনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও। তীব্র বাতাস ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ভারতের সুন্দরবন অঞ্চলের অনেক গাছ উপড়ে গেছে। জলাবদ্ধতার সাথে ক্ষতি হয়েছে অনেক বাড়িঘরের। পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বন সংরক্ষণকারী রবি কান্ত সিনহা বলেছেন, “আমাদের কিছু অঞ্চল খুব খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাতাসের গতি ছিল অনেক তীব্র, বিভিন্ন জায়গায় অনেক বেশি জল প্লাবিত হয়েছে।”
জলবায়ুবিদের মতে, এ দফায় সাগর উপকূল সুন্দরবনের কারণে রক্ষা পেলেও আম্ফানের মতো সুপার সাইক্লোন আগামীতে বড় দুর্যোগের আভাস দিয়ে গেছে। তাই ভবিষতে বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে তাগিদ দিয়েছেন গবেষকরা। এজন্য উপকূলীয় এলাকায় সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক বন সমৃদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।