জীবন্ত জীবাস্ম নামে পরিচিত প্রায় ৫৫ কোটি বছরের আদি প্রাণী রাজ কাঁকড়া। এক সময় বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে এদের দেখা মিললেও এখন বিলুপ্ত প্রায় এরা। গেল শনিবার চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার শঙ্খ নদীর মোহনা বা বঙ্গোপসাগর উপকূলে জেলের জালে ধরা পড়ে দুটি রাজ কাঁকড়া।
জানা গেছে, উপজেলাটির জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের জেলে পাড়া এলাকার রজিত জল দাশ ধরে আনেন টি গিগাস প্রজাতির দুটি রাজ কাঁকড়া। স্থানীয় জেলেরা এটিকে দৈত্য কাঁকড়া নামে ডাকে বলে জানান তিনি।
রজিত জলদাশ বলেন, “প্রতিদিনের মত নদীতে কাঁকড়া ধরতে গেলে কাঁকড়া দুইটি দেখতে পাই। অনেক কষ্ট করে ধরার পর বাড়িতে নিয়ে আসি। কাঁকড়াগুলো যে মহামূল্যবান তা আমি আগে থেকে জানতাম না।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, রাজ কাঁকড়া ‘লিভিং ফসিল’ বা জীবন্ত জীবাশ্ম নামে পরিচিত। বাংলাদেশের সাগর উপকূল থেকে এরা এখন হারিয়ে যাচ্ছে। অলৌকিক ওষুধিগুণের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এই প্রাণীর রক্ত ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অত্যন্ত দামী।
এছাড়া বাংলাদেশে এমন কাঁকড়া সংরক্ষণে আধুনিক ল্যাবরেটরি না থাকায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন ড. মনজুরুল কিবরিয়া। তবে রাজ কাঁকড়া সংরক্ষণে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এক নজরে রাজ কাঁকড়া
অশ্বখুরাকৃতির কাঁকড়া বা সাগর কাঁকড়া। পৃথিবীব্যাপী তিনটি গনের অধীনে এদের চারটি জীবিত প্রজাতি রয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক এই প্রাণীকে ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ বলা হয়। যা প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন বা ৫৫ কোটি বছর পূর্বে ট্রাইলোবাইট থেকে উৎপত্তি লাভ করে। এদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হওয়াতে অঙ্গসংস্থানিক পরিবর্তন ছাড়াই টিকে আছে পৃথিবীতে। সাধারণত রাজ কাঁকড়ার জীবন চক্র ডিম, লার্ভা, জুভেনাইল এবং পূর্ণাঙ্গ দশা নিয়ে গঠিত। এরা ৯-১২ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। পূর্ণ জোয়ারের সময় এরা প্রজনন করে। প্রজননের সময় প্রজাতিভেদে বসন্ত ও গ্রীষ্মের শুরুতে কর্দমাক্ত সৈকত বা নদী পাড়ে বিচরণ করে। রাজ কাঁকড়া ১২-১৯ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।