নয় কুড়ির কান্দা, ছয় কুড়ির বিলের গল্প

অপরুপ টাঙ্গুয়ার হাওর। ছবি: বেঙ্গল ডিসকাভার

বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলা। অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পাশাপাশি মাদার ফিশারিজ এবং দেশের ২য় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। জীব বৈচিত্র্যের ভরপুর টাঙ্গুয়ার হাওর।

প্রবাদ আছে, নয় কুড়ির কান্দা, ছয় কুড়ির বিল সমম্বয়ে গঠিত হাওর পাড়ের মানুষের জীবন বান্দা। হিজল-করচসহ নানা জলজ উদ্ভিদ, লতা-গুল্ম এবং বিরল প্রজাতির মৎস্য সম্পদ ও পাখির নিরাপদ আবাস্থল টাঙ্গুয়াতে। স্বচ্ছ জলরাশির তলদেশে অনায়াসে দেখা যায় নানান প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ ও মাছ।

মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হাওরটি প্রায় একশো কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। শুষ্ক মৌসুমে হাওরের ৫১টি জলমহলের আয়তন থাকে ৬ হাজার ৯১২ একর, আর বর্ষায় প্রায় ২৪ হাজার একর। ২০০০ সালের ১০ জুলাই প্রাকৃতিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পায় এই হাওর।

টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ২০৮ প্রজাতির দেশি বিদেশি পাখি, ১৫০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ১১২ প্রজাতির মাছ, ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১১ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে। বিলুপ্তির প্রায় দশ প্রজাতির পাখি, ছয় প্রজাতির স্তন্যপায়ী, চার প্রজাতির সাপ, তিন প্রজাতির কচ্চপ, দুই প্রজাতির গিরগিটি ও এক প্রজাতির উভচর রয়েছে।

হাওরে রয়েছে প্রায় ৫৫ প্রজাতির দেশি মাছ ও ৩১ প্রজাতির পাখি। প্যালাসেস ঈগর, বড় আকারের গ্রে কিংস্টর্ক, মৌলভীহাঁস, পিয়ারী, কাইম, কালাকুড়া, রামকুড়া, মাথারাঙ্গা, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চোখা হাঁস চোখাচোখি, বিলাশী শালিকসহ নানান পরিযায়ী পাখি। রয়েছে দেশি পাখিও। যেমন- পানকৌরি, জলকবুতর, ডাহুক, মাছরাঙ্গা, গাঙচিল, বক, সারস, শঙ্খ চিলসহ হাজারো পাখি।

এতে রয়েছে বিপন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি কুড়াল। যা বাংলাদেশে রয়েছে মাত্র ১০০টির মতো। ২০১১ সালের পাখি শুমারীতে এই হাওরে প্রায় ৪৭ প্রজাতির জলচর পাখি বা ওয়াটার ফাউলের মোট ২৮ হাজার ৮শত ৭৬টি পাখি গণনা করা হয়। শুমারিতে মরিচা ভুতিহাঁস, পিয়াংহাস, সাধারণ ভুতিহাঁস,পান্তামুখী বা শোভেলার, লালচে মাথা, ভুতিহাঁস, লরালশির, নীলশির, পাতিহাঁস দেখা মিলে।

শীত মৌসুমে পৃথিবীর প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে ১ হাজার ৮শত ৫৫ প্রজাতির পাখিই পরিযায়ী। যেগুলো সুদুর সাইবেরিয়া চীন, মঙ্গোলিয়া,  নেপালসহ শীতপ্রধান দেশ থেকে এসে বিচরণ করে টাঙ্গুয়ার হাওরে।