সাপের রাজত্ব: শীতনিদ্রা হারাম চট্টগ্রামে!

প্রতীকী ছবি। অলোকচিত্রী: আদনান আজাদ আসিফ।

সাপ আতঙ্কে রয়েছেন বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার একটি গ্রামের মানুষ। বাসিন্দারা বলছেন পুরো গ্রামজুড়ে বিচরণ করছে নানা প্রজাতির সাপ। উপজেলা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের সারোয়াতলী গ্রামে গেল দু’মাস ধরে লোকালয়ে বেড়ে চলেছে সাপের চলাফেরা।

গ্রামের বাসিন্দা রনি চৌধুরী বলেন, “ঘরের মধ্যে, বিছানায়, পুকুর, রাস্তাঘাট- সবদিকেই সাপ। বাইক চালানো সময় সামনে পড়ে নানা ধরণের সাপ। সাপের ভয়ে পা ফেলাই আতঙ্কের বিষয় এখন।”

গেল শুক্রবার সাপের কামড়ে আটদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ঘরে ফিরেছেন ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা মীরা আইচ। তিনি বলেন, “ক্ষেতে কাজ করছিলাম। হঠাৎ পেছন থেকে কামড় দিল কিন্তু বুঝতে পারিনি। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার বললো বিষধর সাপে কামড়িয়েছে।”

গ্রামের একটি বাড়ির উঠানে আসা সাপ।

২০১৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশে সাপের দংশনের শিকার হন অন্তত পাঁচ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। আর অন্তত ছয় হাজার মানুষ মারা যায়। বন্যার সময় অর্থাৎ মে, জুন এবং জুলাই- এই তিন মাস সাপের দংশন এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ে।

বন্যপ্রাণী ও সাপ বিশেষজ্ঞদের মতে- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ এলাকায় সাপের কামড় এবং মৃত্যুর ঘটনা বেশি।

কীভাবে এলো এতো সাপ?

কিন্তু বোয়ালখালীর মানুষ বলছেন ভিন্ন কথা। এই শীতে গ্রামে সাপ বেড়েছে অন্য কারণে। গ্রামটির বাসিন্দা সাংবাদিক রমেন দাশগুপ্ত জানান, গ্রামে একটি প্রাচীন খাল ছিলো। গত এক বছর ধরে ওই খালে চলছে সংস্কারের কাজ। এতে খালের দু’পাশে দীর্ঘকাল ধরে গড়ে ওঠা ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর থেকে অসংখ্য সাপ বেরিয়ে আসছে।“

”প্রথমে জমি ও পুকুরে দেখা যেত অসংখ্য সাপ। এখন বসতবাড়িতে উঠে আসছে। চলার পথেই অনেক সময় শব্দ শোনা যায়। আবার সামনেও পড়ে নানা ধরনের সাপ”।

সারোয়াতলী গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এ পর্যন্ত বেশ কিছু সাপ ধরে অনেকে হত্যা করেছে। অনেকে ঘর-বাড়ির জানালা বা অন্য ফাঁকা জায়গাগুলোতে নেট লাগালেও নানা পথে ঘরে প্রবেশ করছে সাপ। অনেকেই বাড়িতে কার্বোলিক এসিড রাখছেন, কিন্তু এতেও কাজ হচ্ছে না।

গ্রামটির খালের পাড়ে পরিষ্কার করা ঝোড়-ঝাড়।

সাংবাদিক রমেন দাশগুপ্তের ধারণা, অনেক প্রাচীন ঝোপঝাড় উচ্ছেদ করায় সাপের বসত নষ্ট হয়েছে। এ কারণেই প্রতিনিয়ত অসংখ্য সাপ চলে আসছে লোকালয়ে। সাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে তিনি বন বিভাগ ও সংশ্লষ্ট বিশেষজ্ঞদের উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভেনোম রিসার্চ সেন্টারের সাপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রমন বলেন, ”এলাকাবাসীর ধারণাই ঠিক।আবাস নষ্ট হওয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে সাপ। এ সময় এতো সাপ বাইরে থাকার কথা নয়।”

“আমরা তিনজনকে পেয়েছি যাদের একজনকে দংশন করেছে বিষধর সাপ। তবে আতঙ্কের কারণে অনেকে সাপ হত্যা করছেন, যা মোটেও ঠিক না। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত,” যোগ করেন বোরহান বিশ্বাস।

বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার সাংবাদিকদের বলেছেন, ইতোমধ্যেই খোঁজ নেয়া হয়েছে। আপাতত ঝোপ-জঙ্গল কাটা বন্ধ করতেও বলা হয়েছে। পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।