বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় কাপ্তাইয়ে চালু হলো স্মার্ট পেট্রোলিং

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে টহলরত বনবিভাগের স্মার্ট পেট্রোলিং টিম। ছবি: বেঙ্গল ডিসকাভার

বন ও বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা ও সংরক্ষণে আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণ বনবিভাগের উদ্যোগে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে স্মার্ট পেট্রোলিং চালু করেছে বাংলাদেশ বনবিভাগ। গত ১৫ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত কাপ্তাই বন বিভাগের বনফুল রেস্ট হাউজে পাঁচ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার মধ্য দিয়ে বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় স্মার্ট পেট্রোলিংয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে।

কর্মশালায় স্মার্ট পেট্রোলের মাধ্যমে কীভাবে বন ও বন্যপ্রাণী বিষয় অপরাধ নির্মুল এবং বনজ সম্পদের সঠিক নিরাপত্তা বিধান করা যায় সে বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। জিপিএস, সাইবার ট্রেকার ব্যবহার করে কীভাবে বন অপরাধ, বন্যপ্রাণী অপরাধ উদঘাটন, অপরাধের মানচিত্র তৈরি, প্রতিবেদন তৈরি করে পরবর্তীতে টহল জোরদার করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা দেয়া হয়।

কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে বিভিন্ন প্রকারের বন্যপ্রাণীর মধ্যে এশিয়ান হাতি অন্যতম, যা দেশে চোরাগোপ্তা হামলার জন্য বিপর্যয়ের মুখে। পাশাপাশি আরো নানা প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী রয়েছে উদ্যানটিতে। চালু হওয়া স্মার্ট পেট্রোলিং ব্যবস্থা উদ্যানের বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ এশিয়ান হাতি সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বন কর্মকর্তারা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, স্মার্টের মত আধুনিক টহল ব্যবস্থাপনা নি:সন্দেহে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের হাতিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী এবং বনজ সম্পদ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। ভবিষ্যতে আমরা পর্যায়ক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের অন্যান্য সংরক্ষিত বনাঞ্চলেও একই ধরনের টহল ব্যবস্থা চালু করবো।

পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন ১৫ জন বিট কর্মকর্তা ও সহকারী বিট কর্মকর্তারা অংশ নেন কর্মশালায়। গেল ১৫ জুন রাঙ্গামাটি অঞ্চলের বন সংরক্ষক ছানাউল্যা পাটোয়ারি প্রধান পাঁচদিনব্যাপী কর্মশালাটি উদ্বোধন করেছিলেন।

১৯ জুন প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি শেষ দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামের দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ্ অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মোস্তাফিজুর রহমানের কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন। কর্মশালায় প্রধান প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন চাইনিজ একাডেমি অফ সাইন্সের গবেষক নাছির উদ্দিন।

এর আগে ২০১৫ সালে ইউএসআইডির বাঘ প্রকল্পের অর্থায়নে এবং ওয়াইল্ডটিমের কারিগরি সহায়তায় সুন্দরবনের পশ্চিম অভয়ারণ্যে স্মার্ট পেট্রোল চালু করে বনবিভাগ। যা পরবর্তীতে বনবিভাগের নিজস্ব অর্থায়নে সমগ্র সুন্দরবনে সফলতার সঙ্গে পরিচালিত হয়ে আসছে।

স্মার্ট পেট্রোল ব্যবস্থা চালুর পর সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যায় ব্যপক বৃদ্ধি হয়েছে বলে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগের জরিপে উঠে আসে। ফলে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে স্মার্ট পেট্রোল ব্যবস্থা চালুর ফলে এ দেশের হাতি সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বন্যপ্রাণী গবেষকরা।