বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাগর উপকূলের সৈকতে বিরল তিমি প্রজাতি ‘ব্রাইডস হোয়েল’ দেখার দাবি করেছেন স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও প্রাণীবিদরা। ২১ জুন ফেসবুকে পোস্ট হওয়া একটি ভিডিও তিমি দেখার এই দাবি ওঠে। তবে ঠিক কোনদিন তিমিটি সৈকতে দেখা গেছে তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। কিন্তু প্রাণীকে ব্রাইডস হোয়েলের বাচ্চা বলে ধারণা করছেন প্রাণীবিদরা।
তবে ভিডিও পোস্টকারী সেভ দ্য ন্যাচার অব বাংলাদেশ সংস্থার চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেনের দাবি, ১৪ জুন তিমিটি সৈকতে আটকে পড়লে স্থানীয়রা ভিডিও করেন এবং তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে পোস্ট দেন তিনি। এদিকে প্রাণীবিদরা ধারণা, সাগরের জলরাশিতে ঘুরে বেড়ানোর সময় সৈকতে আটকে পড়ে তিমি প্রজাতির ব্রাইডস হোয়েলটি।
আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন, ”গত ১৪ জুন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বড়ডেইল এলাকার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন মারিশ বুনিয়ায়ি তিমিটি দেখা যায় বলে জানতে পেরেছি। প্রথমে দেখে স্থানীয়দের নাকি মনে করেছেন বড় আকারের সামুদ্রিক কোন মাছ। প্রাণীটিকে ডলফিন ভেবে আমাকে ফোন করে জানান আমাদের সংগঠনের টেকনাফ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দীন চৌধুরী। তবে ভিডিওটি দেখে প্রাণীবিদরা প্রাণীটিকে ’ব্রাইডস হোয়েল’ বলে নিশ্চিত করেন।”
পোস্ট করা ভিডিওতে প্রাণীটিকে আহত দেখা যাচ্ছিল। দেহ থেকে রক্তও পানিতে মিশতে দেখা গেছে। সাগরে ফিরে যেতে বারবার চেষ্টা করছিল তিমিটি। কিন্তু তীব্র জোয়ারের কারণে হয়তো আটকা পড়ছিল ’ব্রাইডস হোয়েলটি’। তবে স্থানীয়রা প্রাণীটিকে সাগরে ফিরে যেতে সহায়তা করেন বলে জানান ভিডিও পোস্টকারী।
প্রাণীবিদদের মতে, করোনা ভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে বঙ্গোপসাগর ও সাগর উপকূলে মানুষ ও জলযানের চলাচল কমে যাওয়া এবং সম্প্রতি এ দেশে সাগরে তিনমাস মাছ আহরণ নিষিদ্ধ হওয়াতে ডলফিন ও তিমির মতো প্রাণীর বিচরণ বেড়েছে বঙ্গোপসাগরে। প্রাণীবিদদের মতে, গবেষণায় বঙ্গোপসাগরের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন অংশে তিমি বিচরণ করতে দেখা গেছে। তবে সাগর সৈকতে জীবিত তিমি আসার ঘটনা এটাই প্রথম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ভিডিও দেখে নিশ্চিত হয়েছি এটি ’Bryde’s Whale’ বা ব্রাইডস হোয়েল। প্রাপ্তবয়স্ক একটি তিমি প্রায় ৩০-৪০ ফুট লম্বা হয়। টেকনাফে দেখা যাওয়া তিমিটি ১০ ফুটের মতো লম্বা হবে।
”চলমান করোনা সঙ্কটের কারণে সাগরে জাহাজ, নৌকা ও ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। মানুষের উপস্থিতি না থাকায় তিমিটি সৈকতে চলে আসছে। করোনাকালে আমরা দেখেছি; সব প্রাণী মানুষের অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের মতো বিচরণ করছে। এর আগে ডলফিন এসেছিল সৈকতে। একটু স্বস্তি পেলে প্রাণিরা যে তাদের মতো চলতে পারে এই তিমির আগমন তারই প্রমাণ,” উল্লেখ করেন অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ।
বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ বলেন, ”ভিডিওটি দেখেই নিশ্চিত বলা যায় এটি ব্রাইডস হোয়েলের বাচ্চা। এই বয়সে এটি মা তিমির সঙ্গেই থাকার কথা। কারণ তিমির বাচ্চারা মায়ের দুধ পান করে, তাই আরো কিছু বছর মায়ের সঙ্গেই থাকবে। তিমি গভীর সাগরের স্তন্যপায়ী প্রাণী। বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রের সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড অঞ্চলে এই প্রজাতির তিমির দেখা মেলে।”
শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ”এভাবে সাগর সৈকতে একটি বিরল প্রজাতির তিমি চলে আসা মোটেও সু:খকর কোনো ঘটনা না। তাছাড়া ওর পেটের নিচে আঘাতে চিহ্ন দেখা গেছে। আমি চিন্তা করছি কোনোভাবে মা তিমিটির কোনো ক্ষতি হলো কী না…।”