
বঙ্গোপসাগর থেকে আহতবস্থায় সৈকতে আসা তিমিকে সাগরে ফেরত পাঠিয়েছিলেন স্থানীয়রা। এর আটদিন পর ২২ জুন সেই তিমিরই মরদেহ ভেসে আসে সৈকতে। গেল ১৪ জুন তিমিটি বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সৈকতে এসেছিল বলে দাবি করেছিলেন পরিবেশবাদীর। পরে এনিয়ে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। তবে ভিডিও প্রকাশের ২৪ ঘন্টা না পেরুতেই ভেসে আসে মৃত তিমি। প্রাণীবিদরা জানিয়েছিলেন, প্রাণীটি ’ব্রাইডস হোয়েল’ প্রজাতির তিমি।
২২ জুন, সোমবার সকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ঘোলারচর পয়েন্টের বালিয়াড়িতে পড়তে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা।পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মীরা জানান, তিমির দেহে আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও চামড়া ছিল না। আর লেজের অংশে ক্ষত দেখা যায়।
জানা গেছে, সোমবার সকালে ছোট শিশুরা মৃত তিমিটি দেখতে পায়। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা গিয়ে দেখেন প্রায় ছয় ফুট লম্বা তিমিটি। তারা জানান, উপরের অংশ দেখে ডলফিন এবং পেটের নিচের অংশ দেখে তিমি মনে হচ্ছিল। এর আগে গত ১৪ জুন রক্তাক্ত তিমিটি জোয়ারের পানিতে আটকা পড়েছিল। পরে স্থানীরা সাগরে ফিরে যেতে সহায়তা করে সেটিকে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, টেকনাফ সৈকতে মারা যাওয়া জলজপ্রাণীটি তিমি। এটি তিমির বাচ্চাও বলা ঠিক হবে না; কারণ এটির সাইজে দেখে মনে হচ্ছে মধ্য বয়সী একটি তিমি।
”বাংলাদেশে আট প্রজাতির তিমির রেকর্ড আছে। সৈকতে মারা যাওয়া তিমিটি কোন প্রজাতির তা ছবি কিংবা ভিডিওতে বোঝা কঠিন। ওই তিমির শরীরের উপরের অংশে চামড়াও ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। সম্ভবত তিমিটি অসুস্থও হতে পারে,” উল্লেখ করেন অধ্যাপক সাইদুর। তিনি বলেন, ”এখন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ, যদি সাগরে জেলেরা মাছ ধরতো তখন বলা যেত জেলেদের আঘাতে সেটি মারা গেছে। এখন তো সেটিও বলা যাবে না।”
বাংলাদেশে সাগরের বন্যপ্রাণী সুরক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বনবিভাগের। কিন্তু কয়েকদিন আগে রক্তাক্ত একটি তিমি সৈকতে আসা ও আবার মারা যাওয়ার ঘটনায় কোন বক্তব্য জানায়নি বাংলাদেশ বনবিভাগ। এনিয়ে এ দেশের প্রাণীবিদ, সংরক্ষণ কর্মী ও সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়ছে। তাদের অভিযোগ, বারবার ডলফিন-তিমির মতো প্রাণীর মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটলেও বনবিভাগের কর্মকর্তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
কক্সবাজারের পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ”একের পর এক সাগরের প্রাণী মারা যাচ্ছে। যেহেতু কক্সবাজার সৈকতে ডলফিন ও তিমির বিচরণ রয়েছে সেহেতু কোষ্টগার্ড ও উপকূলীয় বন বিভাগ এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী স্থানীয়দের বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি দেয়া উচিত।”
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্স ইনষ্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো শরীফ বেঙ্গল ডিসকভার-কে বলেন, টেকনাফ সৈকতে ভেসে আসা মৃত তিমি আর কয়েকদিন আগে আসা জীবিত তিমি দুটি একই। এ প্রজাতির তিমির বৈজ্ঞানিক নাম ’brydes whale.scientific name holo balaenpotera edeni’। অনেকে বাচ্চা বললেও এটিকে তিমির বাচ্চাও বলা ঠিক হবে না। কারণ এটির সাইজ দেখে মনে হচ্ছে মধ্য বয়সী একটি তিমি। তিমি দল বেঁধে গভীর সাগরে বিচরণ করে। ধারণা করছি, স্বভাব অনুযায়ী মা তিমিও আশপাশেই আছে।”
”বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবনের নিকটে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড অঞ্চলে সাধারণত সামুদ্রিক এই বৃহৎ প্রাণীদের উপস্থিতি আছে। কক্মবাজার থেকে দূরত্ব প্রায় ২৫০-২৮০ নটিক্যাল মাইল। এছাড়া ভারত মহাসাগর বা শ্রীলংকা গভীর সাগরে দল বেঁধে চলে। তাই সেখান থেকে কোন মা তিমির সঙ্গে বা খেলতে খেলতে তিমিটি এখানে (কক্সবাজারে) চলে আসতে পারে। যেহেতু মধ্য বয়সী তিমি দেখা মিলেছে, তাই মা তিমির অবস্থানও এখানে থাকতে পারে। আমাদেরও দায়িত্ব আছে। কিন্তু জনবল কম, তাই অনেক কিছু করতে পারি না। কোস্ট গার্ড ও উপকূলীয় বন বিভাগের এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত,” উল্লেখ করেন সমুদ্র বিজ্ঞানী আবু সাঈ মো শরীফ।