রুদ্রসাগরের জলে নীরমহলের ছায়া

অপরুপ প্রকৃতিতে নীরমহল।ছবি: সুমন গোস্বামী

ঘাটে দাঁড়িয়ে দেখলে মনে হবে জলের বুকেই বুঝি নীরমহল। আসলে তা নয়। রুদ্রসাগর পেরিয়ে যেতে হবে রাজার অবকাশ কেন্দ্রে। এই সাগরও শুধু নামেই সাগর। আসলে এক বিশাল হ্রদ। আর নীরমহল ভারতের সর্ববৃহৎ জল প্রাসাদ।

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহীজলা জেলা। সেখানেই ত্রিপুরা রাজার গ্রীষ্মকালীন অবকাশ কেন্দ্র নীরমহল।

গেলো ৭ ফেব্রুয়ারি আখউড়া স্হলবন্দর দিয়ে আগরতলা যায় চট্টগ্রাম থেকে জানার্লিস্ট ত্রিুকেট ক্লাবের ২৩ জনের দল। অংশ নেয় আগরতলার জনপ্রিয় দৈনিক স্যন্দন পত্রিকার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এক প্রীতি ত্রিুকেট ম্যাচে।

যা দুই বাংলার সাংবাদিকদের মধ্যে এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিলো। আগরতলা আন্তজার্তিক উমাকান্ত স্টেডিয়াম। ওই পাঁচদিনের সফরে ওই সফরেই পুরো আগরতলা শহর এবং আসাপাশে বিভিন্ন দশর্নীয় স্থান ঘুরে দেখার সুযোগ মিলে।

পরদিন সকালে আগরতলা শহর থেকে যাত্রা শুরু নীরমহলের পথে। বিশ্রামগঞ্জে পেরিয়ে রাস্তার দু’ধরে অপরুপ প্রকৃতি আর গাছপালি ঘেরা পাহাড়ি অপরুপ পথ এঁকেবেঁকে চলে গেছে। যাওয়ার পথেই পড়ে সিপাহী জলা ফরেস্ট পার্ক, ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়।
যাত্রার দেড় দুই ঘন্টা পর পৌঁছলাম সেই নীরমহলের প্রান্তে। দুপুরে রোদের ডাবের পানিতে তৃষ্ণা মেটালাম। এরপর টিকিট কেটে নৌকায় চড়ে বসলাম।

সুনীল আকাশের ছায়া পড়ে হ্রদের জলের। অতিথি পাখিরা পযর্টকদের স্বাগত জানায় ডুব সাঁতারে। জেলেরা ব্যস্ত নিত্যদিনের কাজে। দূর থেকে ছোট আকারে দেখা গিয়েছিল নীরমহলকে। তবে হ্রদের পথ যত ফুরিয়ে আসে তত স্পষ্ট হয়ে ওঠে নীরমহলের অবয়ব।

প্রায় পাঁচ দশমিক তিন বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে নীরমহল। ত্রিপুরা রাজ্যের শেষ রাজা বীর বিত্রুম মানিক্য এই নীরমহল প্রাসাদটি তৈরি করেছিলেন। নিমার্ণ কাজ শুরু হয় ১৯৩০ সালে। উদ্ধোধন হয় ১৯৩৮ সালের ১২ মে।

ভারতের সবচেয়ে বড় এবং পূর্ব ভারতের একমাত্র প্রাসাদ এটি। দেশটিতে শুধুমাত্র দু’টি জল প্রাসাদ আছে। অন্য আরেকটি রাজস্থান রাজ্যের জলমহল।

মহারাজা বীর বিত্রুম মানিক্য বাহাদুরের একটি সুরম্য প্রাসাদ তৈরির ভাবনা আসে। ১৯২১ সালে প্রাসাদ নিমার্ণে ব্রিটিশ কোম্পানী- ‘মার্টিন ও বানর্স’কে নিয়োগ দেন। এই কাজ সম্পন্ন করতে নয় বছর সময় নিয়েছিল কোম্পানীটি।

নীরমহল প্রাসাদটি হিন্দু ও মুসলিম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছিল। প্রাসাদটি দুই ভাগে ভাগ করা হয়। পশ্চিম ও পূর্ব অংশে।

প্রাসাদটির পশ্চিম অংশে অন্দর মহল নামের পরিচিত। এটি রাজ পরিবারের জন্য তৈরি করা হয়। পূর্বের দিকের অংশটি খোলা আড়ম্বপূর্ণ থিয়েটার। নীরমহল প্রাসাদে মোট ২৪টি কক্ষ রয়েছে।

সকাল ৯টা থেকে ৫টা পযর্ন্ত খোলা থাকে নীরমহল। ঘুরে দেখতে হলে ১০ টাকা প্রবেশ মূল্য দিতে হয়। শীতে নীরমহলের পানিতে হাজার হাজার অতিথি পাখির দেখা মিলে।

আগরতলা শহর থেকে নীরমহল যেতে লোকাল বাস বা ভাড়ায় মাইত্রেুাবাসে ও প্রাইভেট কার পাওয়া যায়। নীরমহল ঘুরে এসে রাজঘাটের পাশে পযর্টকদের জন্য সাগরমহল আছে। সেখানে খাবারের ব্যবস্থা আছে।

রয়েছে রাত্রিযাপনের সুবিধও। বিকেলে গোধুলী আলোয় নীরমহল আরো মায়াবি হয়ে ওঠে। রাজকীয় এই স্থাপত্য নিদর্শন দেখে মন ভরে উঠে আনন্দে।

লেখক: সাংবাদিক, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ