তালিকাভুক্ত আন্ত:সীমান্ত নদীর মানচিত্র

আন্ত:সিমান্ত নদীর মানচিত্র। ছবি: রিভারাইন পিপল, বাংলাদেশ

আমি আনন্দিত ও গর্বিত যে, আমার বন্ধু ও সহযোদ্ধা মোহাম্মদ এজাজ ও তার সহযোগীরা ‘তালিকাভুক্ত আন্ত:সীমান্ত’ নদীর এই মানচিত্র তৈরি করেছেন। রিভারাইন পিপলের ঢাকা বিভাগীয় কর্মসূচি ‘ঢাকা রিভার্স’ থেকে। মোহাম্মদ এজাজ এই কর্মসূচির প্রধান গবেষক। আমি মানচিত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে অবমুক্ত করছি। আমি সম্মানিত, আপনারাও শ্লাঘা বোধ করতে পারেন।

রিভারাইন পিপল থেকে আমরা সাধারণত ‘আন্ত:সীমান্ত’ নদী বলতে চাই না; কারণ এইসব রাষ্ট্র বা সীমান্ত চিহ্নিত হওয়ার আগে থেকেই নদীগুলো প্রবাহিত ছিল। অন্যক্ষেত্রে বরং নদীই সীমান্ত নির্ধারণ করে থাকে।

রিভারাইন পিপলের একটি শ্লোগান আছে: ‘কমন রাইটস অন কমন রিভারস’। অভিন্ন নদীতে অভিন্ন অধিকার। তবু দাফতরিভাবে যেহেতু ‘ট্রান্সবাউন্ডারি’ বলা হয়, মানচিত্রে সেটাই থাকলো; একই সঙ্গে ‘কমন’ নদী করার ওকালতিও জারি থাকবে রিভারাইন পিপল থেকে।

আমরা “আন্তর্জাতিক” নদীও বলতে চাই না; কারণ নদীর মালিকানা কোনও রাষ্ট্র বা জাতির একক বা যৌথভাবেও হতে পারে না। নদী বরং সভ্যতা ও জাতির জন্ম দিয়েছে। আমরা বরং বলতে চাই “অভিন্ন নদী”

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে ৫৪টি অভিন্ন নদী ‘স্বীকৃত’। সরকারি গবেষণা সংস্থা সিইজিআইএস দুই বছর গবেষণা করে আরও ১৬টি অভিন্ন নদী চিহ্নিত করে। বছর খানেক আগে সেই তালিকা ভারতকে দিয়েছে বাংলাদেশ।

আন্ত:সীমান্ত নদীর মানচিত্র

অনেক বলেন ও লেখেন, ৫৪টি নদী ভারত থেকে এসেছে। বাস্তবে অন্তত একটি নদী বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে ভারতে গেছে, যেমন কুলিক। অন্তত তিনটি নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকে আবার ভারতে গেছে, যেমন আত্রাই বা আত্রেয়ী।

মিয়ানমার থেকেও তিনটি নদী আসার কথা বলা হলেও বাস্তবে সংখ্যাটি বেশি। বিষয়টি বিবেচনা করে এই মানচিত্রের শিরোনাম করা হয়েছে ‘এনলিস্টেড ট্রান্সবাউন্ডারি রিভারস অব বাংলাদেশ’

তালিকাভুক্ত ৫৪টির বাইরে থাকা অন্যান্য অভিন্ন নদীর স্বীকৃতি দাবি আমরা রিভারাইন পিপল থেকে অনেকদিন ধরেই করে আসছি। এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে তা খানিকটা এগিয়ে গেলেও মনে রাখতে হবে, ১৬টির বাইরে আরো অভিন্ন নদী রয়েছে। আমি নিজেও এ ব্যাপারে একটি গবেষণা করছি কয়েক বছর ধরে।

আমরা চাইব- যত ছোটই হোক প্রত্যেকটি প্রবাহ তালিকাভুক্ত হতে হবে। তালিকাভুক্ত নদীর ক্ষেত্রেও ভারত ভাটির দেশের অধিকারের তোয়াক্কা করে, তেমন নয়। কিন্তু অচিহ্নিত রাখার অর্থ হচ্ছে, কাগুজে অধিকারের সুযোগটুকুও ছেড়ে দেওয়া।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে প্রস্তাবিত ১৬টি নদীর নাম হলো- হাড়িভাঙ্গা, সংকোষ, কর্ণঝড়া, সমেশ্বরি, মহারশি, উপদাখালি, মঙ্গলেশ্বর, মহাদেও, মহিষখোলা, রাঙ্গা বাগলি, কাশিমারা, চেলা, জালিয়াছড়া, লুবহা, লোহার ও কর্ণফুলি।

বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন নদীর মানচিত্র রিভারাইন পিপল প্রথম করল, এমন নয়। এর আগে যৌথ নদী কমিশন, আইইউসিএনের মতো আরও কিছু সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মানচিত্র আমি দেখেছি। এর মধ্যে রিভারাইন পিপলেরটা কেমন হয়েছে, আপনারাই বিচার করবেন। নিজের ঢোল নিজে পেটানো উচিত হবে না। সবাইকে নদীময় শুভেচ্ছা।

লেখক: সাংবাদিক ও নদী বিষয়ক সংগঠক, বাংলাদেশ

***প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বেঙ্গল ডিসকাভার কর্তৃপক্ষ লেখকের মতামতের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।