পরিযায়ী পাখি আসা কমেছে বাংলাদেশে!

বাংলাদেশের জলাশয়ে পরিযায়ী পাখি। ছবি: বেঙ্গল ডিসকাভার

বাংলাদেশের জলমহল, জলাশয় ও সুন্দরবনে প্রতি বছর প্রায় দুই কোটি পরিযায়ী পাখি আসে। তবে সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের শিকার হওয়াতে এ সংখ্যা কমেছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এমনই তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ বনবিভাগের সাবেক কর্মকর্তা তপন কুমার দে।

সম্প্রতি বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা এ কথা জানান সাবেক ওই কর্মকর্তা। তিনি জানান, বছরে বিশ্বে ৩০০ মিলিয়ন টনের বেশি প্লাস্টিক পণ্য দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে মানুষ। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বছরে ৮০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য নদী-নালা হয়ে সমুদ্রে পতিত হচ্ছে। এতে দূষণের শিকার হচ্ছে ১০ লাখের বেশি সামুদ্রিক পাখি।

‘সমুদ্র সৈকতে আসা পাখির খাবারের সঙ্গে প্লাস্টিকের ছোট ছোট অংশ খাদ্যনালীতে চলে যায়। এমনকি পাখির ছোট বাচ্চাদের পাকস্থলীতে প্লাস্টিক কণা যাওয়াতে অকালে মারা যায়’- উল্লেখ করেন তপন কুমার দে। তিনি জানান, ৯০ শতাংশের বেশি সামুদ্রিক পাখির পরিপাকতন্ত্রে প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। গবেষকদের আশঙ্কা, আগামী ২০৫০ সালে ৯৯ শতাংশ পাখির পেটে প্লাস্টিক কণা পাওয়া যাবে।

তিনি জানান, ইস্ট এশিয়ান-অস্ট্রেলিয়ান ফ্লাইওয়ে পথে বিশ্বের প্রায় ২৫০ প্রজাতির পাঁচ কোটি পরিযায়ী পাখি চলাচল করে। যার মধ্যে ২৮টি প্রজাতি আন্তর্জাতিকভাবে মহাবিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আকস্মিক বন্যা ও পরিবেশগত নানা কারণেও ওইসব অঞ্চলে জলজ জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে এ বছর পরিযায়ী পাখির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

পরিযায়ী পাখিদের সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ানো, পাশাপাশি পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের যথাযথ প্রয়োগের দাবিও জানান তপন দে।

প্রাণী বিজ্ঞানী মো. মোস্তফা ফিরোজ জানান, বাংলাদেশে ৬৯০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখা যায়, এরমধ্যে ৩৩৭টি দেশিয় প্রজাতির, ২০৮টি প্রজাতি শীতকালীন পরিযায়ী পাখি। এদের ১২ প্রজাতি আসে গ্রীষ্মকালে, ১৪ প্রজাতি ভ্রমণ পথের পরিযায়ী আর ১১৯ প্রজাতি ভবঘুরে বা অনিয়মিতভাবে আসে। দেশে পরিযায়ী পাখির মধ্যে মাত্র ৯০ প্রজাতি জলচর আর বাকি সবই স্থলচর।

এছাড়া অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষিজমি বৃদ্ধি, সংকীর্ণ আবাসস্থল, শিকার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে বলেও উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা, বাংলাদেশে এসে দেশীয় হাঁসের সঙ্গে বিচরণ করায় তাদের এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে। এজন্য পরিযায়ী পাখিদের বিচরণ এলাকায় হাঁস-মুরগির খামার না করার পরামর্শ দেয়া হয় সভায়।