মশা নির্মুলে এখন উভয় সংকট!

২০ জুলাই বিশ্ব মশা দিবস, এবার এমনই সময় দিবসটি সামনে এলো যখন বিশ্ব জুড়ে মশাবাহিত প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত মানুষ। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবেশ-প্রতিবেশে মশার ইতিবাচক ও নেতিবাচক- দুই প্রভাবই রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সাময়িকী নেচার ডটকম ও মস্কুটোভিউ বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে জানায়, একদিকে পানিতে জন্ম নেয়া মশার লার্ভা মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর খাদ্য। তেমনি লার্ভা নিজেই অতিক্ষুদ্র জৈব পদার্থ ভক্ষণ করে পানি প্রক্রিয়াজাতকরণেও সহায়তা করে।

ফড়িং, মাকড়শা, পাখি ও বাদুরসহ বেশ কিছু পতঙ্গভোজী প্রাণীর খাদ্য তালিকার অংশ পূর্ণবয়স্ক মশা। ফুলের রেণু খেয়ে পরাগায়নেও সহায়তা করে এই পতঙ্গটি।

বিপরীতে মশার ক্ষতিকর ভূমিকাও একেবারে কম না। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, পীতজ্বর ও এনসেফালাইটিসসহ নানান রোগের বাহক হিসেবে পতঙ্গ হয়ে উঠতে প্রাণঘাতীও।

নেচার ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়, যদি কোনো এক জায়গায় বিশেষ একটি রোগের উপস্থিতি না থাকলে, এতে সেই রোগ মশার মাধ্যমে বিস্তারের কোনো ঝুঁকিই থাকে না। যদি আক্রান্ত মানুষ বা প্রাণী যদি ওই এলাকায় চলে আসে, আর সেখানে মশার উপস্থিতি থাকে, তবে সুস্থদের মধ্যেও অচিরেই ওই রোগ ছড়িয়ে পড়বে। মশা এতে বাহক হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

এতে আরো বলা হয়, মশা যতই ভয়াবহ কিংবা বিরক্তি উৎপাদকই হোক না কেন, বিজ্ঞানীরা কখনোই এই পতঙ্গটির বিলুপ্তি করার পক্ষে না।

তাদের মতে, ইকোসিস্টেমে থাকা কোনো প্রাণীকেই সম্পূর্ণ ধ্বংস করা উচিত নয়। কারণ যে কোনো পতঙ্গের বিনাশের মানেই প্রাণ ও প্রকৃতিতে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনা।

জলজ পতঙ্গবিজ্ঞানী রিচার্ড মেরিট বলেন, কিছু প্রাণীর জন্য মশা খুঁজে পাওয়া খুবই আনন্দদায়ক ব্যাপার। কারণ তারা এটি সহজেই ধরে খেতে পারে।

গবেষকরা জানান, মশার লার্ভা না থাকলে কয়েক শত প্রজাতির প্রাণীকে বেঁচে থাকতে তাদের খাবারে পরিবর্তন আনতে হবে। যদিও কিছু বিজ্ঞানী বলছেন, মশার বিলুপ্তি ঘটলেও বড় ক্ষতি ছাড়াই পৃথিবী টিকে যাবে। কিন্তু কীভাবে এটা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, সেটাই এখানে বড় কারণ হিসেবে দেখা দেবে।

বিজ্ঞানীদের মতে, প্রাণী জগতে মশা বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা না রাখলেও পতঙ্গটি মারতে যে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে, তা অন্যদেরও ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে সহজে। এতে ঝুঁকিতে পড়বে মশার লার্ভার আকারের অণুজীব। অর্থ্যাৎ মশা ধ্বংস করতে গিয়ে একই আকৃতির বহু ছোট প্রাণীর বিনাশ ঘটতে পারে। শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে মাছসহ অন্যান্য যেসব প্রাণী মশার লার্ভা খেয়েই বাঁচে, সংকটে পড়বে সেই ছোট প্রাণীগুলোই।