
বাড়ি-ঘরের ভেতরে সবুজ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে রাখা গাছগুলো যেহেতু প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক আলো বাতাস পায় না। তাই অনেক সময় এগুলো ঠিকঠাক বেড়ে উঠে না, আবার মারাও যায়। তবে কিছু নিয়ম মেনে পরিচর্যা করলে আরো প্রাণবন্ত ও তরতাজা রাখা যায় গাছগুলোকে। তেমনই মৌলিক কয়েকটি বিষয় নিয়ে আজকের লেখা।
সামান্য আলো বাতাসে টিকে থাকা ইনডোর বা ছায়াবান্ধব গাছ বেছে নিতে হবে, এজন্য নির্বাচন করতে হবে সঠিক স্থানও। সামান্য আলো বাতাস বা রোদ পায় এমন জায়গা নির্বাচন করে গাছ সাজাতে হবে। এক্ষেত্রে সবচে উপযুক্ত স্থান ঘরের পূর্ব ও পশ্চিম দিক বরাবর গাছ রাখা। তবে অবশ্যই এই দু’দিকে জানালা বা খোলা অংশ থাকতে হবে, যাতে রোদের আলো ও বাতাস গাছ পর্যন্ত পৌছাতে পারে।
ঘরের দক্ষিণ বা উত্তর দিকে সূর্যের সরাসরি আলো ও বাতাস তুলনামূলক কম পৌঁছাতে পারে, তাই এই অংশে গাছ রাখলেও অন্তত ১৫ দিন আন্তর সূর্যের আলোর সংস্পর্শে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা রেখে দিলে গাছ সজীব থাকবে।
খেয়াল রাখা প্রয়োজন: কার্টেইন বা পর্দার সামনে বা আড়ালে বা যে অংশে গরম বা ঠান্ডা বাতাস নির্গত হয়, যেমন- এসি, রেডিয়েটর, ফ্রিজ, টিভি এমন যন্ত্রাংশের পাশে গাছ না রাখাই উত্তম।

ইনডোরের গাছগুলো যেহেতু ছোট বা মাঝারি আকারের টবে বা পাত্রে রাখা হয়, তাই নিয়মিত বিরতিতে পরিমান মতো পানি দেয়া প্রয়োজন। এই গাছগুলোতে পানির ঘাটতি হলে দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই গাছভেদে প্রতিদিনই পানি দেয়া উত্তম। তবে বেশি পানি বা ঘন ঘন পানি দেয়া হলে গাছের ছোট টবের তলায় পানি জমে শেকড় পঁচিয়ে ফেলতে পারে, এমনকি গোড়ায় পানি জমে মারা যেতে পারে গাছ। তাই এমনভাবে পানি দিতে হবে, যেন পানি দেয়ার দশ মিনিটের মধ্যে গোড়ায় বা মাটির উপরিভাগে আর কোন পানি জমে না থাকে।
নিয়মিত গাছে পানি দিতে না পারলে গাছের গোড়ায় বা মাটির উপরিভাগে এক ইঞ্চি পরিমাণ পুরু করে কোকোডাস্ট বা নারিকেলের খোসার গুড়া দিয়ে রাখতে পারেন। এতে কোকোডাস্ট অতিরিক্ত পানি ধরে রাখতে পারে এবং বেশি পানি দিয়ে ফেললেও কোকোডাস্ট তা ধরে রাখতে পারে।
ভিন্ন ভিন্ন গাছ চাহিদা অনুযায়ী কোকোডাস্টে জমে থাকা পানি থেকে পানি শুষে নিতে পারে। পাশাপাশি দুই তিন মাস পর কোকোডাস্ট পঁচে মাটিতে মিশে প্রাকৃতিক সারেও পরিণত হয়। যা গাছের পুস্টি চাহিদাও পূরণ করে অনেকাংশে।
এজন্য দুই তিন মাস অন্তর নতুন করে কোকোডাস্ট প্রয়োগ করলে অধিক সুফল পাওয়া যায়। একেক গাছের পাশি শোষন ক্ষমতা একের রকম, কাজেই বুঝে উঠতে না পারলে যেকোন গাছের গোড়াতেই এক ইঞ্চি পরিমাণ পুরু কোকোডাস্ট দিয়ে রাখা যায়।

ইনডোর গাছ বেশ সংবেদনশীল। বাইরের ধুলাবালি, ছত্রাক ও ব্যাক্টেরিয়া জনিত নানান রোগে আক্রান্ত হয়। তাই এক-দুই দিন অন্তর গাছ ও পাতাগুলোকে মুছে দিলে গাছ সুস্থ রাখা যায়।
পাতা মোছার কাজে নরম সুতি কাপড় ব্যবহার করাই উত্তম। তবে একি কাপড় সব গাছে ব্যবহার করলে এক গাছের রোগ অন্য গাছে ছড়াতে পারে, তাই ভিন্নতা রাখা উত্তম।
আজকাল পাতা পরিস্কারে বাজারে বিভিন্ন এন্টিসেপ্টিক সোপ, জেল ও লোশন পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো ব্যবহারেও সুফল পাওয়া যায়। শুকনো ও মরা পাতা বা আক্রান্ত পাতা অপসারণ করে ধ্বংস করে ফেলা উচিত। পাতায় কোন পোকার আক্রমণ দেখা দিলে শুরুতেই গাছটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া এবং হাত বাছাইয়ের মাধ্যমে পোকা বা মাকড় সরিয়ে ফেলা।
ঘরের ভেতরে যেহেতু থাকে তাই গাছগুলোতে রাসায়নিক কীটনাশক স্প্রে না করে জৈব পদ্ধতিতে রোগবালাই দমন করা যায়। আদা, রসুন, মরিচ, নীমপাতা, ফিটকারি, এলোভেরা কিংবা দারুচিনির বাটা, গুড়া বা নির্জাস গাছের বালাইনাশক হিসেবে বেশ কার্যকর।

মাটিতে রোপণ করা গাছের শেকড় যত্রতত্র ছড়াতে পারে। কিন্তু ছোট টবে বা পাত্রে লাগানো গাছ বেড়ে উঠে সামান্য মাটিতেই।ওই অল্প মাটি থেকেই সংগ্রহ করে খাবার ও পুষ্টি নিয়ে বেঁচে থাকে গাছ। তবে কিছু সময় পর ওই মাটিতে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি উপাদান থাকে না। তাই কয়েকমাস পরপর মাটিতে খাদ্য ও পুষ্টি যোগ করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে হয়। বিশেষ করে নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, লৌহসহ অন্য মৌলিক পুষ্টি উপাদানগুলো যোগান দিলো সবুজ ও তরতাজা থাকে গাছ।
পরিপূর্ণ পুষ্টিসম্পন্ন গাছ রোগবালাই মুক্তও থাকে। ঘরে থাকা সহজলভ্য উপকরণ যেমন চা পাতা, কলার খোসা, ডিমের খোসা, পেয়াজের পাতা পঁচা, খৈল ও গোবর ইত্যাদি পরিমান মতো মাটির সঙ্গে মিশিয়ে টবের মাটিতে পুষ্টিগুণ বাড়ানো সম্ভব।
প্রুনিং ও ট্রিমিং। ইনডোরের একটি চারাগাছ বা ছোট গাছ নতুন মাটি পেলে দ্রুত বাড়তে থাকে। তবে এতে গাছ শুধু লম্বাই হতে থাকে, চারপাশে ডালপালা ছড়াতে পারে না। গাছ বেশি লম্বা ও বড় হলে এক পর্যায়ে গাছটি পুষ্টিহীনতায় ভুগতে থাকে। কমে যায় গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।
অপ্রয়োজনীয় বা মরা ডাল ও পাতা ছেটে দিলে গাছ হালকা হয়ে যায়। এতে অন্য পাতা, ডালপালা বেশি খাবারের যোগান পায়। গাছের গোড়া থেকে নতুন শাখা প্রশাখাও ছড়াতে থাকে।
লেখক: ছাদ বাগান উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা, গ্রিন সেভার্স নার্সারি, বাংলাদেশ