‌একই দেশে পরিবেশ নিয়ে বিপরীত চিত্র আশা করিনি!

দ্যা রয়্যাল বোটানিক্যাল পার্ক, ভূটান। ছবি: শুভীপ অধিকারী

(৪র্থ পর্ব): আমরা পুনাখাতে রাত্রে না থেকে চলে আসি পাশের জেলা ওয়াংডুর বাজো শহরে। পুনাসাঙ্গ ছু-র ধারে অবস্থিত খুব সুন্দর ছোটোখাটো একটা পরিকল্পিত শহর। পুনাখা থেকে দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। চারদিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ফুলে ফুলে রাস্তার ডিভাইডার গুলো সাজানো।

এদেশের বিভিন্ন শহরে জনসচেতনতা মূলক বোর্ড দেখেছি, যেখানে সাধারণ মানুষকে সার্ভিক্যাল ক্যান্সার বা এইচ.আই.ভি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। আবার কোথাও মাদকের কুফল সম্পর্কে বলা আছে।

বাজোতে একরাত কাটিয়ে পরদিন সকালে রওনা দিই পারোর পথে। প্রথমে যাই দ্যা রয়্যাল বোটানিক্যাল পার্কে। ভূটানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত বনের মধ্যে করিডর হিসাবে কাজ করে এই পার্ক। তবুও পার্ক সংলগ্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে আবর্জনা পোড়ানোর দৃশ্য দৃষ্টিকটু লাগে।

পার্কের ভিতর গাছের গায়েও পেরেক মেরে নোটিশ টাঙানোর বিষয়টিও এর ব্যতিক্রম নয়। সাথে ট্যুরিস্টদের যেমন খুশি তেমন আচরণও বিরক্তিকর লাগে। নিয়ম-কানুন থাকলেও তা ঠিকমতো মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা দেখার লোকের খুব অভাব ভূটানে।

পারোর পথে রাস্তায় দু জায়গায়- একটা পাহাড়ি ঝর্ণা আর রাস্তার পাশে জঙ্গলের ধারে বোর্ডে লেখা দেখলাম, সেটা স্থানীয় স্কুল আর কলেজের এডপ্ট করা। অর্থাৎ ‌ওই জায়গার যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।

শিক্ষার্থীদের স্কুলের চারপাশ পরিষ্কার করে সেই আবর্জনা (যার বেশিরভাগটাই প্লাস্টিক) এক জায়গায় জড়ো করে পোড়াতে দেখলাম। বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থী। একই দেশে পরিবেশ নিয়ে এইরকম বিপরীত চিত্র দেখবো আশা করিনি।

পারোর পথে অনেক জায়গায় ধাপ চাষ হতে দেখলাম। পাওয়ার টিলার দিয়ে কাজ করছেন কৃষকরা। বড়সড় লঙ্কা, ভুট্টা, গম, বিনস এমনকি ধান চাষও হতে দেখেছি। ভুটানের মতন সচেতন দেশ জিরো টিলেজ এগ্রিকালচার সিস্টেমের দিকে পা বাড়াতেই পারে। তাহলে দেশের কার্বন ইমিশনের হার আরো কমবে।

পারোর একটু আগে থেকেই দেখলাম অনেক জায়গায় নতুন বাড়িঘর, হোটেল তৈরির জন্য সারি সারি কাঠের লগ কাটা। নগরায়নের সাথে তাল মেলাতে কোপ পড়ছে বনভূমিতে। সাথে পাথর ভাঙ্গার মেশিন ধুলো উড়িয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে বাতাসে। পারো শহরও দ্রুত আকারে বাড়ছে।

শহরের বসতির একটা বড় অংশ ভারতীয় নির্মাণ শ্রমিকরা। বীরপাড়ার মফিজুলের সাথে কথা হচ্ছিল। সে ইলেকট্রিকের কাজ করে। বলছিল দেশের থেকে এখানে মজুরি বেশি, তাই এখানে কষ্ট করে হলেও পড়ে আছে। কাজের চাপের জন্যে ঈদেও বাড়ি ফিরতে পারবে না মফিজুলরা। সবারই মন খারাপ।

ভূটানের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এই শহরেই। পারো ছু-এর ধারে। রাস্তার ধারের এয়ারপোর্ট ভিউ পয়েন্ট থেকে পাখির চোখে দেখা যায় প্লেনের ওঠানামা। এয়ারপোর্টের অন্য দিকে চেনচোর বাড়ি। আমাদের পারোয় হোটেলে নামিয়েই চেনচো বাড়ি চলে যাবে। ডেচেনও তাই। পারোর আশেপাশে অনেক জায়গায় ইলেকশন অ্যাডভারটাইজিং বোর্ড দেখলাম।

গণতন্ত্রের সব থেকে বড় উৎসব ভোটাধিকার প্রয়োগ। এই দেশে দেয়াল লিখন, পোস্টার সাটানো, হোডিং আটকানোর মতন দৃশ্য বা দূষণ নেই। ভোট হলে শুধু এই বোর্ডে নির্বাচন সংক্রান্ত সব নোটিশ আটকে যাবে। বাকি দায়িত্ব জনগণের।

লেখক:গবেষক ও শিক্ষক, ভারত

চলবে… (পর্ব-৫ম, আগামীকাল)