
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বাড়ছে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা। অন্যদিকে কমে যাচ্ছে সবুজ এলাকা, জলাশয় ও খোলা উদ্যান। শনিবার রাজধানীর প্ল্যানার্স টাওয়ারে ঢাকা শহরের বায়ু, পরিবেশ ও বসবাসযোগ্যতা নিয়ে এক গবেষণাপত্রে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় বলা হয়, ঢাকা শহরে কেন্দ্রীয় নগর এলাকায় কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা মোট এলাকার প্রায় ৮২ ভাগ। আর জলাভূমির পরিমান মোট এলাকার প্রায় ৪.৩৮ ভাগ। প্রয়োজনের তুলনায় এ পরিমাণ জলজ ভুমি ও সবুজ এলাকা খুবই নগণ্য বলে উল্লেখ করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
তারা বলেন, দিন দিন জলজভূমি ও খালি জায়গা কংক্রিট আচ্ছাদিত হয়ে যাচ্ছে। এতে বাসযোগ্য তালিকার বৈশ্বিক মানদন্ডে তলানিতে অবস্থান করছে রাজধানী ঢাকা।
গবেষকরা উল্লেখ করেন, একটি আদর্শ শহরে ১৫-২০ ভাগ সবুজ এলাকা এবং ১০-১৫ ভাগ জলাশয় থাকা দরকার। কিন্তু ক্রমান্বয়ে চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। তাই সবুজ এলাকা, জলাশয় ও নির্মিত এলাকার ভারসাম্য রক্ষা করার তাগিদ দিচ্ছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান। তিনি বলেন, একটি নগরের বাসযোগ্যতা নির্ভর করে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার ওপর। এ ব্যবস্থাপনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশে মানবঘটিত কর্মকান্ডের ক্ষতিকর প্রভাব এড়ানো। প্রাকৃতিক উপাদানগুলো যেমন- পানি, বায়ু, মাটি, জলাশয় ইত্যাদি দূষণরোধ ও সংরক্ষণের মাধ্যমে নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা।
অপরিকল্পিত নগরায়নের প্রভাবে ঢাকা শহর ও সংলগ্ন এলাকার কৃষিজমি, জলাশয়সহ নিচু এলাকাগুলো এবং সবুজের আচ্ছাদন ব্যাপক হারে কমছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এতে শিল্প কারখানা ও যানবাহনের কালো ধোঁয়া, ইট ভাটা এবং নির্মাণ কাজের কারণে ঢাকার বায়ু দূষণ আশংকাজনক হারে বেড়েছে।

গবেষণায় ভূমি ব্যবহারের চিত্রে দেখা যায়, ১৯৯৯ সালে জলাভূমির শতকরা হার ১৪.২৫ শতাংশ, সবুজ আচ্ছাদন ৬.৬৯ শতাংশ, কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ৬৪.৯৯ শতাংশ এবং খোলা জায়গা ১৪.০৭ শতাংশ। যা গত ২০ বছরে পরিবর্তিত হয়ে ২০১৯ সালে জলাভূমির শতকরা হার ৪.৩৮ শতাংশ, সবুজ আচ্ছাদন ৯.২০ শতাংশ, কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ৮১.৮২ শতাংশ এবং খোলা জায়গা ৪.৬১ শতাংশে এসে দাঁড়ায়।
বারিধারা, বনানী, গুলশান, মহাখালী ও বাড্ডা এলাকায় কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার শতকরা হার ৮৮.৪৬ শতাংশ। সেই তুলনায় সবুজ আচ্ছাদন মাত্র ০.৮৪ শতাংশ। বড় বাগ, কাজী পাড়া, শেওড়া পাড়া ও ইব্রাহীমপুর এলাকায় কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার শতকরা হার ৯৯.১৪ শতাংশ। খিলগাঁও, গড়ান, মেরাদিয়া, বাসাবো ও রাজারবাগ এলাকায় কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার শতকরা হার ৯৭.৬০ শতাংশ, সেই তুলনায় সবুজ আচ্ছাদন মাত্র ০.৯০ শতাংশ।

সোয়ারী ঘাট ও বংশাল এলাকায় কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার শতকরা হার ১০০ শতাংশ এবং সিদ্দিক বাজার ও শাখারী বাজার এলাকায় কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার শতকরা হার ৯৯.৪২ শতাংশ। সেই তুলনায় এসব এলাকায় কোন সবুজ আচ্ছাদিত এলাকা নেই, জলজ এলাকার পরিমানও অতি নগন্য। বাংলাদেশের অন্য শহরগুলোর অবস্থা যাতে এমন না হয়, সেদিকে নজর দিতে পরামর্শ দেন গবেষকরা।
পরিকল্পনাবিদ ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকা শহরকে অনেকদিন ধরে আমরা একটি দোকানের মত দেখার চেষ্টা করছি। অনেকেই নিজের লাভের জন্য অনেক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। কোন শহর কতটা সফল হবে তা নির্ভর করে তার গণ-পরিসর, গণ-পরিবহন ও পরিসেবার উপর।
এ অবস্থা থেকে ঢাকা শহর রক্ষায় এলাকাভিত্তিক সবুজ এলাকা গড়ে তোলা, শহরেরে চারপাশে সবুজ বেষ্টনী তৈরি ও বিদ্যমান জলাশয় সংরক্ষণ ও দখলকৃত জলাশয় পুনরুদ্ধারসহ দশ দফা সুপারিশ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স।