ডলফিন ও চারটি মাছের জীবন রহস্য উন্মোচন

হালদা নদীর ডলফিন। ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্বে প্রথমবারের মতো মিঠা পানির ডলফিন ও চার প্রজাতির মাছের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশের গবেষকরা। একইসঙ্গে উন্মোচিত হয়েছে কাতলা মাছের জীবন রহস্যও। বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন পাওয়ার পর এই গবেষণাটিকে অনুমোদন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন-এনসিবিআই। এতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের অধিকারও।

১৬ নভেম্বর, মঙ্গলবার এক ওয়েবিনারে হালদা নদীর ডলফিন ও চারটি কার্প জাতীয় মাছের পুর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উন্মোচনের বিষয়টি জানায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ। এ গবেষণা দলের প্রধান ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি ড. মঞ্জুরুল কিবরীয়া।

গবেষণায় কারিগরি সহায়তা দেন চট্টগ্রাম ভ্যাটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এএমএএম জুনায়েদ সিদ্দিকী। গবেষণা কার্যক্রমে অংশ নেন নিউজিল্যান্ড এবং চীনের দুই গবেষকসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ এবং ভেটেরিনারি ও বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থী।

অধ্যাপক ড. এএমএএম জুনায়েদ সিদ্দিকী বলেন, “দুই বছরের গবেষণায় হালদা নদীর ডলফিন ও চারটি কার্প জাতীয় মাছের পুর্ণাঙ্গ জিনোম সিকুয়েন্সিং করা সম্ভব হয়েছে। এরমধ্যে বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মিঠা পানির ডলফিন ও রুই ও কালিবাউসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকুয়েন্স করা গেছে। একই সঙ্গে দেশে প্রথমবারের মতো কাতলা ও মৃগেল মাছের জীবন রহস্য উন্মোচিত হলো, এর আগে চীন মৃগেল ও ভারত কাতলা এই মাছের জিনোম সিকুয়েন্স করেছে।”

অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরীয়া বলেন, ‍“হালদা নদী বাংলাদেশের রুই জাতীয় মাছের একমাত্র বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক জিন ব্যাংক। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অত্যাধুনিক পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাস একটি খুবই কার্যকর পদ্ধতি। যার ফলে মাছের শারীরবৃত্তীয় গবেষণা সম্ভব হচ্ছে। ইতোপূর্বে বন্য পরিবেশে বড় হওয়া রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশের কোন পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাস করা হয়নি। তাই আমাদের এই গবেষণা হ্যাচারি ও বন্য পরিবেশে বড় হওয়া উক্ত প্রজাতিগুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইনব্রিডিং সমস্যাসহ পরিবেশগত পরিবর্তন, অসুস্থতা, রোগের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ‘জৈবিক প্রক্রিয়া’ খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।”

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক নমিতা হালদার বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী ড. মঞ্জুরুল কিবরীয়ার প্রস্তাব পেয়েই আমরা এই গবেষণা পরিচারনার সিদ্ধান্ত নিই। কোনো প্রকল্প হিসেবে নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পিকেএসএফ এই সহায়তা করেছে। আগামীতেও হালদার মাছ ও দুই তীরের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাবে।”

পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাস উদঘাটনের কাজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

গবেষকরা জানান, অত্যাধুনিক এনজিএস প্রযুক্তি এবং সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডলফিন এবং রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ মাছের একটি জিনোম ডাটাবেস তৈরি করা। হালদার কার্প মাছগুলোর গুরুত্বপূর্ণ জিন সনাক্তকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যত বাণিজ্যিকিকরণের স্বার্থে হালদার ব্র্যান্ডিংয়ের কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় তথ্য, ডাটাবেস ও জেনেটিক মার্কারের উদ্ভাবন করা।

বিপন্ন প্রজাতির ডলফিনের সংরক্ষণের জন্য শারীরবৃত্তীয় তথ্য উপাত্ত সংশ্লিষ্ট জিনসমূহ এবং বিবর্তনের উৎস হিসেবে হালদার কার্প ও ডলফিনের জিনোমের তথ্যভান্ডার তৈরি করা। হালদার কার্প ও ডলফিনের জীববৈচিত্র্য ও সংরক্ষণের স্বার্থে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গবেষকদের মধ্যে সমন্বয় করা।