কোটি টাকার মাছ ভেসে গেল নিমিষেই

বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া একটি পুকুর। ছবি: বেঙ্গল ডিসকাভার

ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে সুনামগঞ্জে পুকুরের পাড় উপচে পানি প্রবেশ করায় ভেসে গেছে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকার চাষ করা মাছ।

খামারিরা জানান, জাল দিয়ে আটকে রেখেও ঠেকাতে পারেনি ক্ষতি। জেলার ৬২১টি পুকুরে রুই, মৃগেল, কাপ জাতীয় মাছ ও সদ্য ফেলা রেনু, পোনাও ভেসে গেছে ঢলের পানিতে। এতে ধারদেনা করে মাছ চাষ করা খামারিরা বিপাকে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল হক বলেন, দুই দফা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে জেলার ৬২১টি পুকুরের প্রায় দুই কোটি ৬২ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। এতে বিভিন্ন উপজেলার খামারিদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির হিসাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবগত করা হয়েছে।

জানা গেছে, মৎস্য চাষিরা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ করে বাড়ির পাশের পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেছিলেন। কথা ছিল মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করার।

জেলা শহরের হাছন নগরের মৎস্য খামারি রফিকুল ইসলাম বলেন,দুই দফা বন্যায় আমার পুকুরের ২-৩ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। আমি এখন নিঃস্ব। সরকারি সহযোগিতার জন্য মৎস্য অফিসে লিখিত আবেদন করেছি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, সদর উপজেলার ১২৫টি, ছাতকের ৪টি, ধর্মপাশা উপজেলার ২৩টি, তাহিরপুর উপজেলার ২০টি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ৩৩৬টি, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৭৮টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ১০টি এবং জামালগঞ্জের ২৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের চালবন গ্রামের মাছ চাষি হেলাল মিয়া বলেন, হঠাৎ করে বানের পানি পুকুরের ত্রিশ হাজার টাকার রুই, মৃগেল, গ্রাসকার্প সিলভারকার্প মাছ ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, পানির প্রবল চাপে পুকুরের পাড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সলুকাবাদ ইউনিয়নের দেড় শতাধিক পুকুরের মাছ ঢলের পানিতে ভেসে গেছে। প্রতিটি পুকুরে গড়ে লাখ টাকার মাছ ছিল।

“পুকুরে পাঁচ হাজার টাকার বিভিন্ন জাতের পোনা মাছ ছেড়ে ছিলেন। কিন্তু এখন পুকুরে আর কোন মাছ নেই সব মাছ ঢলের পানিতে ভেসে গেছে.” জানান জগন্নাথপুর গ্রামের শহীদ মিয়া।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ভূঁইয়া জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সরকারের কোন সহযোগিতা আসলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

জেলা মৎস্য বিভাগে জানায়, গত মাসের শেষদিকে বন্যায় বিশ্বম্ভরপুরে ২৫০টি, সদরে ১১৭টি, দোয়ারবাজারে ৩১টি পুকুরের ৫৭ টন মাছ, ৪৩ লাখ পোনা ভেসে যায়। যা মাছের বাজার দর একশো ১২ কোটি টাকা আর পোনার মূল্য ৩১ লাখ টাকা এবং অবকাঠামোগত ক্ষতি ১৭ লাখ টাকা।