ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী হতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত। প্রথমবারের মতো আজ সোমবার মধ্যরাতে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা হবে ‘চন্দ্রায়ন ২’। অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার মহাকাশ কেন্দ্র থেকে ভোর রাত ২টা ৫১ মিনিটে যাত্রা শুরু হবে চন্দ্রযানটি।
অত্যন্ত শক্তিশালী, সর্বাধুনিক ‘জিএসএলভি-মার্ক-থ্রি’ রকেটে যুক্ত হয়ে রওনা হবে চন্দ্রযান-২। এতে থাকবে একটি ‘অরবিটার’। যা চাঁদের বিভিন্ন কক্ষপথে থেকে প্রদক্ষিণ করবে।
চন্দ্রযান-২-এ থাকবে একটি ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। থাকবে একটি রোভারও। যার নাম- ‘প্রজ্ঞান’। যা চাঁদের পিঠে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে-চরে বেড়াবে।
জানা গেছে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর অঞ্চলে নামবে চন্দ্রযানটি, আগে যেখানে নামতে পারেনি কোন দেশ। তাই অভিযানটি বিশ্বে প্রথম বলে মন করা হচ্ছে। চন্দ্রযান-২-এ সঙ্গে যুক্ত আছেন একজন বাঙালির নামও। যিনি বানিয়েছেন চন্দ্রযান-২-এর সাতটি অ্যান্টেনা।
বলা প্রয়োজন, উৎক্ষেপণ হওয়ার পর থেকে সব কিছুই স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিতে কাজ করবে। উৎক্ষেপণের পর ১৭ দিন ধরে গতি বাড়িয়ে ৬গুণ করা হবে, যার সাহায্যে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে চাঁদের দিকে এগিয়ে যাবে চন্দ্রযান-২।
চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছতে চন্দ্রযানটিকে পাড়ি দিতে হবে প্রায় ৩.৮৪ লক্ষ কিলোমিটার। সময় লাগবে পাঁচ দিন।
চন্দ্রযানের তিনটি অংশ প্রায় পুরোটাই তৈরি ভারতে। এ কারণেই খরচ হয়েছে খুবই কম। এই তিনটি অংশ এবং মূল মহাকাশযানের মিলিত ওজন প্রায় ৩ হাজার ৮৫০ কেজি।
চন্দ্রযান-২ তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৯৭৮ কোটি টাকা। যা সবচে কম খরচে তৈরি হওয়া চন্দ্রাভিযানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ভারতের আগে মাত্র তিনটি দেশ রোভার পাঠাতে সক্ষম হয়েছে চাঁদে। রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন), আমেরিকা ও চীন।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, উৎক্ষেপণের প্রায় দেড় মাস পর সেপ্টেম্বরে ৫ বা ৬ তারিখ রাতে চাঁদে নামবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। নামার মাত্রই সেটি থেকে বেরিয়ে আসবে খুবই ছোট একটি রোভার ‘প্রজ্ঞান’। যার ওজন মাত্র ২০ কিলোগ্রাম।
ল্যান্ডারটি নেমে আসার সময় চন্দ্রযান-২-এর অরবিটারটি চাঁদের থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার উপরে থাকবে।
জানা গেছে, চাঁদের বালিকণায় কোন কোন মৌল ও খনিজ পদার্থ কী বা কতো পরিমাণ রয়েছে, তা জানতে পাঠানো হচ্ছে এই চন্দ্রযান-২। সেই মৌল বা খনিজগুলি নিষ্কাশনের যোগ্য কি না, তা যাচাই করা হবে। এই স্বপ্নটি প্রথম দেখেছিলেন ভারতের প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, দক্ষিণ মেরুর দিকেই চাঁদের অন্দরে এখনও বয়ে চলেছে জলের ধারা। উল্কাপাত বা অন্য কোনও মহাজাগতিক বস্তু আছড়ে পড়ায় সেখানে একটি বিশাল গর্ত (ক্রেটার) তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এর ফলে চাঁদের অন্দরে মৌল বা খনিজ বা জলের খোঁজতল্লাশের কাজটা সহজতর হয়ে উঠতে পারে।
উল্লেখ্য, ভারতের প্রথম চন্দ্রাভিযান হয়েছিল ২০০৮ সালে। চাঁদের কক্ষপথে গিয়েছিল চন্দ্রযান-১। চাঁদে জলের অন্যতম উপাদান হাইড্রক্সিল আয়নের হদিশ দিয়েছিল চন্দ্রযান-১।
এই মিশনে ভারতের ভূমিকা প্রধান হলেও সহযোগিতায় ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, বুলগেরিয়া এবং ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি। এতে খরচ হয়েছিল ৪৫০ কোটি টাকা। ২০০৮ সালে ভারতের পোলার স্যাটেলাইট ভেইকেল (পিএসএলভি) লঞ্চ করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ২০২২-র মধ্যে রকেটে করে চন্দ্রাভিযানের কক্ষপথে অভিযাত্রীকে পাঠানোর অঙ্গীকার করেছেন।
সেটি সম্ভব হলে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে, জিও-স্ট্র্যাটেজিক স্টকগুলিতে কম খরচে বানানো ভারতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ বাণিজ্যমহলে জনপ্রিয়তা অর্জন করবে সহজেই। এবং দেশ চুক্তিবদ্ধ হবে মহাকাশ শক্তি নিয়ন্ত্রক সংগঠনের সঙ্গে।
বিশ্বে সর্বপ্রথম আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করে মহাকাশে পাঠিয়েছিল ১৫ অ্যাপোলো মিশন। যাতে করে আর্মস্ট্রং সহ ছয় মহাকাশচারী প্রথম পাড়ি দিয়েছিলেন চাঁদে।
জানুয়ারিতে চীন ৮.৪ বিলিয়ান ডলার খরচ করে পাঠায় চ্যাং লুনার ক্র্যাফ্ট। ছয় এবং সাতের দশকে রাশিয়া আজকের হিসেবে ২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে পাঠিয়েছিল মহাকাশ যান।
#Chandrayaan2, the Rs 1,000-crore mission, consists of an Orbiter, Lander and Rover, all equipped with scientific instruments to study the moon.
— The Indian Express (@IndianExpress) ১৪ জুলাই, ২০১৯
Here’s all you need to know about the mission: https://t.co/7EP35dKzpX pic.twitter.com/v1F5ZNlCBm