চারপাশ জুড়ে শুধুই কঙ্কাল, তবে ভয় নেই

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি জাদুঘর। ছবি: বেঙ্গল ডিসকাভার

যেদিকে চোখ যাবে সেদিকেই সাজিয়ে রাখা প্রাণীদের কঙ্কাল ও দেহ। কোনটি ছোট, কোনটি বড় প্রাণীর। আবার জীবন্ত বাঘ, ময়ূর, সাপ ও পাখি দেখেও চমকে উঠতে পারেন কেউ কেউ। এগুলোকে অবশ্য বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়- ট্যাক্সিডার্মি।

কাঁচের বাক্সে রাসায়নিকে সংরক্ষিত নানান প্রাণীর এক রোমাঞ্চকর সমন্বয়ে করা বাংলাদেশে প্রথম এনাটমি জাদুঘরের কথা বলছি। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে এনাটমি ও হিস্টোলজি বিভাগে গড়ে তোলা হয়েছে সুবিশাল এই এনাটমি মিউজিয়াম।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচ্চ শিক্ষা ও মনোন্নয়ন উপ প্রকল্পের আওতায় এনাটমি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফর রহমানের ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠিত হয় জাদুঘরটি।

যাই হোক, প্রাণী জগত নিয়ে করা এই মিউজিয়ামের প্রবেশ পথে দেখা মিলবে বিশাল একটি হাতির কস্কাল। পাশেই রয়েছে মস্ত এক উট ও কুকুরে কঙ্কাল। আর ভেতরে রয়েছে বিশাল অজগর ও কুমির! ভয় পাবেন না এগুলোও কঙ্কাল।

রয়েছে মানুষের কঙ্কালও। সেইসঙ্গে ঘোড়া, গাভী, ষাঁড়, ছাগল, ভেড়া, শুকর, ইড়াল, খরগোস, গিনিপিগ, কচ্ছপ, কোবরা, বাদুড়, হাঁস, মুরগি, কুবতর, রাজহাঁস, কোয়েলসহ নানা প্রাণী, পাখি ও সরীসৃপের কস্কাল। যা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এই জাদুঘরে।

আর মিউজিয়ামের দেয়ালে  শোভা পাচ্ছে প্রাণীদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের তথ্য-চিত্র। যা একজন শিক্ষাথী বা দশর্নাথীকে প্রাণীদেহ সর্ম্পকে জানাতে ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও আছে প্রাণীবিজ্ঞান ও এনাটমি বা শরীরবিদ্যার বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখা বিজ্ঞানীদের ছবি ও তথ্য।

জীব বিজ্ঞান নিয়ে জানার আগ্রহ যাদের আছে তাদের জন্য পরিপূর্ণ ভাণ্ডার বলা যায় এই জাদুঘরটিকে। এতে প্রায় ৬০টি কস্কালের পাশাপাশি রাসায়নিক দিয়ে সংরক্ষিত আছে বিভিন্ন প্রাণীর ৫০০টি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। রয়েছে দুই হাজার হাড়, ৭৫টি প্রাণীর মডেল ও তিন হাজার বিভিন্ন প্রকারের স্লাইড। আরও রয়েছে প্রাণী ও পাখির ৩০টি স্টাফিং।

স্টাফিং ইতিহাস

মৃত প্রাণীর চামড়া ছাড়িয়ে ট্যানারি মত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তুলা, রড, জিআই তার দিয়ে প্রাণীর অবয়ব তৈরি হয়। প্রাচীন মিশরে প্রাণীকে যেভাবে মমি করে রাখা হতো, স্টাফিং অনেকটা তেমনই মমির মত।  

১৭৪৮ সালে প্রকাশিত প্রাকৃতিক ইতিহাসে এনসাইক্লোপিডিয়ায় ফ্লান্সের রওমা অঞ্চলে স্টাফিং পদ্ধতিতে পাখি সংরক্ষণের কথা জানা যায়। সে সময় ফ্রান্স, জামার্নি, ডেনমার্ক ও ইংল্যান্ডে স্টাফিং পদ্ধতিতে প্রাণী, পাখী জলজপ্রাণী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা হতো।

১৮৩৭ সালে ভিক্টোরিয়া যুগ শুরু হলে এই শিল্প ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তখন স্টাফিং করা পাখি দিয়ে ঘর-বাড়ি সাজানো হতো। ১৮৫১ সালে লন্ডনের হাইড পার্কের প্রদর্শনীতে স্টাফিং করা পাখিও দেখানো হয়েছিলো।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় এনাটমি মিউজিয়ামে ও রয়েছে স্টাফিং করা প্রাণীর মধ্যে রয়েছে রাজহৎসী কবুতর, মোরগ, কাঠ-ঠোঁকরা, ডাহুক, দোয়েল, পেঁচা, মাছরাঙ্গা, কোয়েল, খরগোস, গিনিপিগ এবং টিকটিকি।

এছাড়া নারী-পুরুষ মানবদেহ, বিড়াল-কুকুরসহ নানা প্রাণীর ডিএনএ ত্রেুামোজম, রয়েছে মানুষের চোখ, হৃদপিণ্ড জরায়ু, ফুসফুস, কিডনিসহ অনেক মডেল। মিউজিয়ামে রয়েছে কয়েকটি প্রাণীর প্লাস্টিনেটেড অঙ্গ প্রত্যঙ্গ।

প্রকৃতপক্ষে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্লাস্টিনেশন একটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল প্রত্রিুয়া। যা বাংলাদেশে এখনো ব্যাপকভিওিতে পরিচিত নয় বললেই চলে। অবশ্য দেশিয় পদ্ধতিতে কয়েকটি প্লাস্টিনেশন করা হয়েছে এই জাদুঘরে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে যে কোন দিন প্রবেশ মূল্য ছাড়াই ঘুরে আসতে পারেন জাদুঘরটিতে।