সিংহ সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানেন?

সিংহ। ছবি: সংগৃহীত

বড় বিড়াল জাতীয় প্রাণির মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম মাংসাশী প্রাণি সিংহ। আচরণ ও স্বভাবগত কারণে পৃথিবীতে রাজকীয় বন্যপ্রাণী অর্থাৎ বনের রাজা বলা হয় সিংহকে। আফ্রিকার বনাঞ্চলে বেশি বিচরণ রয়েছে সোনালী রঙের এই প্রাণীটির। তবে এশিয়ার কয়েকটি দেশের বনাঞ্চলে আছে সিংহ।

রাজকীয় এই প্রাণির খাদ্য বা শিকার তালিকায় অন্যতম- কৃষ্ণসার, জেব্রা, হরিণ, ইম্পালা, আফ্রিকান মহিষ, জিরাফ ও বন্য শুয়োর। বর্তমানে আফ্রিকার বনাঞ্চলে ৩০ হাজার এবং আর এশিয়ায় রয়েছে ৩৫০টি সিংহ। প্রাণ-প্রকৃতি সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সংস্থা- আইইউসিএন’র লাল তালিকা অনুযায়ী, বড় বিড়াল জাতীয় প্রাণির মধ্যে সিংহ এখন বিপন্ন প্রজাতি। গত শতাব্দীতে ৮০ শতাংশ কমেছে সিংহের সংখ্যা।

২০১৩ সালের ১০ আগস্ট থেকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এবং বিগ ক্যাট ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা বেভারলি জুবার্ট এবং ডেরেক দম্পতির আন্তরিক সহযোগিতায় পালিত হচ্ছে বিশ্ব সিংহ দিবস। প্রাণীটির নিরাপত্তা জোরদার, বাস্তুসংস্থান রক্ষা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টি দিবসটির প্রধান উদ্দেশ্য।

মানুষের কাছে অত্যন্ত তেজস্বী, ক্ষিপ্র এবং অসাধারণ সুন্দর প্রাণী হিসেবে পরিচিত সিংহ। এ কারণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পণ্যের ব্র্যান্ডিং ও বিজ্ঞাপনে চোখে পড়ে এই প্রাণীটির ব্যবহার।

Embed from Getty Images

জানুন সিংহের কিছু তথ্য:

নিজেদের মধ্যে লড়াই বা শিকারের সময় সময় আহত হওয়া কিংবা মানুষ আক্রমণে প্রাকৃতিক পরিবেশে বন্য সিংহের আয়ুষ্কাল ৮-১০ বছর। তবে পালিত সিংহরা বাঁচতে পারে ২৫ বছর পর্যন্ত। পুরুষ সিংহ সাধারণত তিন বছর বয়সে যৌন পরিপক্কতা লাভ করে। বন্য সিংহ দুই বছর পরপর প্রজনন করে। তবে পালিত সিংহরা প্রতিবছর বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এদের গর্ভকাল ১১০-১২০ দিন।

বিড়াল প্রজাতির যত প্রাণী আছে তার মধ্যে সিংহের গর্জনই সবচেয়ে বেশি জোরালো। এই গর্জন এতোই তীব্র যে এটি ১১৪ ডেসিবল হতে পারে এবং শোনা যেতে পারে পাঁচ মাইল দূর থেকেও।

জন্মের পর বাচ্চা সিংহ অন্ধ থাকে। তিন থেকে এগারো দিন পর চোখ ফোটে। দুই মাস পর হাঁটতে শিখে এবং তিন মাস পর মাংস খাওয়া শুরু করে। সিংহের প্রধান আবাস তৃণভূমি, বনভূমি। এরা দলভুক্ত প্রাণি এবং প্রত্যেকটি দলে (প্রাইড) সিংহের সংখ্যা দুই থেকে চল্লিশটি।

পুরুষ সিংহ দিনে ৪০ কেজির বেশি মাংস খেতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেঁচে থাকতে হলে একটি নারী সিংহের দিনে গড়ে পাঁচ কেজি এবং পুরুষ সিংহের দরকার হয় সাত কেজি মাংস। একদিনে সিংহ খেতে পারে আট থেকে নয় কেজি মাংস। তবে এর চেয়েও অনেক বেশি মাংস খেতে পারে। দেখা গেছে- একটি সিংহী একদিনে ২৫ কেজি এবং একটি সিংহ এক বসাতেই খেতে পারে ৪০ কেজিরও বেশি মাংস।

Embed from Getty Images

শুধুমাত্র পুরুষ সিংহের কেশর থাকে। কেশর তাদের পুরুষত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। দুই বছর বয়সে কেশর গজায়। কেশর থেকে জানা যায় বয়স। পুরুষ সিংহ চেনার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায় হচ্ছে এর কেশর। এর রঙ যত গাঢ় প্রাণীটির বয়সও ততই বেশি।

শাবক প্রতিপালনে পুরুষ সিংহের কোন ভূমিকা নাই। দুই বছর পর্যন্ত মা সিংহ শাবকগুলোর যত্ন নেয়। ততদিনে তারা শিকার রপ্ত করে ফেলে। দুই বছর বয়সী সিংহ তাদের দল (প্রাইড) থেকে বিতাড়িত হয়। নতুন টেরিটোরতে আশ্রয় নেয়।

ঘণ্টায় ৫০ মাইল গতিতে দৌড়াতে পারে সিংহ। বন্যপ্রাণীদের মধ্যে দ্বিতীয় দ্রুততম প্রাণী এই সিংহ যা কিনা ঘণ্টায় ৫০ মাইল গতিতে দৌড়াতে পারে।

রাতের সিংহের দৃষ্টিশক্তি মানুষের চাইতে ছয়গুণ বেশি। দিনের বেলায় একটি সিংহের যে দৃষ্টিশক্তি তার সাথে মানুষের দৃষ্টিশক্তির খুব বেশি পার্থক্য নেই। সিংহের রেটিনায় কম ‘কোন সেল’ থাকার কারণে তারা কম রঙ দেখতে পায়। কিন্তু রাতের বেলায় এই প্রাণীটির দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি বদলে যায়। দেখার জন্যে মানুষের চোখে যত আলোর প্রয়োজন হয় এর ছ’ভাগের এক ভাগ আলোতেই দেখতে পায় সিংহ।

এক মাইল দূর থেকেও শিকারের আওয়াজ শুনতে পায় সিংহ। সিংহের শ্রবণশক্তি অত্যন্ত তীব্র। এদের কান এমনভাবে তৈরি যাতে যেদিক থেকে শব্দ আসে সেদিকেই কান ঘুরিয়ে দিতে পারে। এই স্পর্শকাতর শ্রবণশক্তি কারণে সহজেই শিকারকে শনাক্ত করতে পারে প্রাণীটি।

লেখক: প্রাণী চিকিৎসক ও কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ