
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় মশা নিয়ে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই নগরবাসীর। সিটি করপোরেশনের নতুন নির্বাচিত মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই মশা তাড়ানোই যেন মূল কাজ হয়ে দাঁড়ায়। সম্প্রতি মশার উৎপাত কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েও কোন কূলকিনারা করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। তাই এবার প্রাকৃতিকভাবে দমনে ব্যাঙকে ব্যবহার করতে চাইছে তারা।
২০ মার্চ, শনিবার এমনই একটি খবর প্রকাশ অনলাইন গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন। সংবাদটি সম্পাদনা করে মূল বিষয়বস্তু বেঙ্গল ডিসকাভারের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। সংবাদে বলা হয়, “গাপ্পি মাছ,হাঁস চাষ ও ড্রোন ব্যবহার করে মশা নিধনের মতো উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ নগর কর্তৃপক্ষ। তাই ব্যাঙ আমদানি করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসি।”
গণমাধ্যমটি জানায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে আনা ব্যাঙ ছেড়ে দেয়া হবে রাজধানীর পুকুর, ডোবা ও জলাশয়ে। প্রাথমিকভাবে ডিএসসিসির কয়েকটি জলাশয়ে অবমুক্ত করা হয়েছে কিছু ব্যাঙ। তবে কীটতত্ত্ববিদরা দাবি, এই উদ্যোগ হাস্যকর। কারণ মাছ,হাঁস ও ব্যাঙ চাষ কখনও মশার লার্ভা ধ্বংস করতে পারে না। পৃথিবীর কোনও দেশে এমন নজির নেই।
ডিএসসিসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে সংবাদে বলা হয়,ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই মাছ ও হাঁস চাষের মাধ্যমে নগরীতে মশা নিয়ন্ত্রণের কথা জানান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তাই নগরীর বিভিন্ন পুকুরে মাছ ও হাঁস অবমুক্ত করা হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই মাছ ও হাঁস উধাও হয়ে যায়। পুকুর ও জলাশয়ের পানি অতিরিক্ত দূষণের কারণে সেগুলো মারা যেতে পারে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। মাত্রাতিরিক্ত দূষিত ঢাকার পুকুর ও জলাশয়ে ব্যাঙ কতদিন বাঁচবে তা নিয়েও শঙ্কায় খোদ সিটি করপোরেশন।
কর্মকর্তাদের বক্তব্য:
সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করে কিছু ব্যাঙ আমাদের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত পুকুর ও জলাশয়গুলোতে অবমুক্ত করেছি।”
সংগ্রহ করা ব্যাঙগুলো ঢাকার পরিবেশের জন্য উপযুক্ত কিনা- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “পরীক্ষামূলকভাবে পদক্ষেপটি নেয়া হয়েছে। এখন পর্যবেক্ষণ করা হবে ব্যাঙগুলো বাঁচে কিনা। কারণ শহরের খাল ও জলাশয়ের পানি যে পরিমাণ দূষিত তাতে ব্যাঙগুলো নাও বাঁচতে পারে। যদি সফল হয় তবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।”
বিশেষজ্ঞ মতামত:
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) চেয়ারম্যান এবং কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, “মশা দমনের জন্য ডিএসসিসি পাতিহাঁস ও তেলাপিয়া মাছ ছেড়েছিল। নতুন করে ১৫ হাজার ব্যাঙ আমদানি করছে। একটা বিষয় স্পষ্ট- পৃথিবীর কোথাও হাঁস ও ব্যাঙ দিয়ে কখনও মশা নিয়ন্ত্রণ হয়নি, হবেও না। হাঁস ও ব্যাঙের খাবার হচ্ছে অন্য কিছু।”
“বাংলাদেশে ৩৭ প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। এই ব্যাঙের প্রত্যেকটির এক একটি রেঞ্জ রয়েছে। সুন্দরবন বা কক্সবাজার এলাকার ব্যাঙ যদি ঢাকায় এনে ছেড়ে দেয়া হয় তা মারা যাবে। কিছু কিছু ব্যাঙ আছে খুবই দুর্লভ। সেগুলো যদি ধরে এনে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে,” যোগ করেন ড.মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “বড় ব্যাঙ মশার লার্ভা খায় না। সেগুলো স্থলভাগে থাকে। এদের ৯৯ শতাংশের খাবার হচ্ছে বড় খাবার-ঘাস থেকে শুরু করে মাংস পর্যন্ত খায়। এই খাবার থেকে তারা অনেক ক্যালোরি পায়। কিন্তু একটা মশা থেকে কত ক্যালোরি পেতে পারে… খুব একটা বেশি না। তবে ব্যাঙাচি মশার লার্ভা উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি করে।”
কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, “ব্যাঙাচির লার্ভা মশা উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যখন বৈশাখ বা জৈষ্ঠ্য মাসে বৃষ্টির পরিষ্কার পানিতে ব্যাঙ যখন প্রজনন করে। সেখান থেকে যখন ব্যাঙাচি হয় তখন সেই পানিতে মশার লার্ভা উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সে সময় মশা তো জমিতে নেই, থাকে ঘরের ভেতরে। তখন এডিস মশার সৃজন। এসব উদ্ভট প্ল্যান করে সময় নষ্ট করছে সিটি করপোরেশন।”