ফের জালে ডলফিন, সংরক্ষণে ভরসা জেলেরাই?

বাংলাদেশের শরীয়তপুরে জালে আটকে পড়া ডলফিন। ছবি: সংগৃহীত

লোনা বা মিঠা পানির ডলফিন, কোনটিই যেন রেহাই পাচ্ছে না বাংলাদেশে। নিয়মিত নদী-সাগরে দূষণ ও জালে আটকে মারা যাচ্ছে ডলফিন। এ বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার অংশে নানা কারণে মারা গেছে ১১টি ডলফিন। সম্প্রতি লকডাউনের মধ্যে এপ্রিলের শুরুতে ডলফিন মারা যাবার খবর প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। আজও বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলার সখিপুরে জালে আটকে যায় মিঠা পানির একটি ডলফিন। তবে সেটিকে হত্যা না করে পানিতে অবমুক্ত করেন জেলেরা।

জানা যায়, সোমাবার, ২৭ এপ্রিল পদ্মা নদীতে জেলের জালে আটকে পড়ে একটি মিঠাপানির ডলফিন। ডলফিন হাতে নিয়ে জেলেদের তোলা সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন আবির মাহমুদ বেলাল নামের এক ব্যক্তি। স্ট্যাটাসে তিনি জানান, “আজ সকালেই পদ্মা নদীতে স্থানীয় জেলে মোস্তফা মোল্লাহর জালে ধরা পড়েছে ডলফিন। শুশুকটি ছবি তোলার পর ছেড়ে দিয়েছে জেলেরা।”

তবে বারবার জেলেদের জালে ডলফিন আটকে পড়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে সমালোচনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পোস্টকৃত ছবিতে আহমেদ আবদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি লিখেন, “এইটা ডলফিন নয় তারই ছোট জাত মিঠা পানির ডলফিন যাই হোক ছেড়ে দেয়াই ভালো।”

শরীয়তপুরে জালে আটকে পড়া ডলফিন। ছবি: সংগৃহীত

আল আমিন রেমু নামে অপর এক ব্যক্তি লিখেন, “এটাকে ছেড়ে দেওয়া হোক, প্রকৃতি তার পুরনো রূপ ফিরে পাচ্ছে। এই পৃথিবীটা শুধু মানুষের একার নয়, সকল জীবের অবাধ বিচরণ এর জায়গা।”

তবে জালে আটকে পড়া ডলফিন মুক্ত করার ক্ষেত্রে সচেতন না হলে প্রাণীটি মারা যেতে পারেন বলে জানিয়েছেন বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ। এজন্য জেলেদের সচেতনতা ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

“জলজ প্রাণী ধরলে বা জালে আটকা পড়ার পর প্রাণীগুলো আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এতে প্রাণীদের শরীর থেকে প্রচুর মাত্রায় ল্যাক্টিক এসিড নির্গত হয়ে। ফলে ডলফিনের মতো প্রাণীরা দুর্বল হয়ে যায়। এ কারণে মারাও যেতে পারে প্রাণীটি। তাই সাগরে ডলফিনের মতো প্রাণীদের উদ্ধার প্রক্রিয়ায় সাবধান হতে পরামর্শ দেন তিনি। তা না হলে অবমুক্ত করার আগে বা পরেও ওই প্রাণীর জীবন সংকটে পড়তে পারে,” উল্লেখ করেন গবেষক আদনান।

জেলেদের ধরা মহাবিপন্ন করাত মাছ। ছবি: আদনান আজাদ আসিফ, বন্যপ্রাণীবিদ।

বনবিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এস এম জহির উদ্দিন আকন বলেন, জলের প্রাণীদের নিরাপত্তা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত জনবল বন বিভাগে নেই। জলজ প্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে মৎস্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণের কারণে আইনি প্রক্রিয়ায় বনবিভাগের বেগ পেতে হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে শরীয়তপুরে ডলফিন আটকে পড়ার ঘটনায় অনেকেই ডলফিন সংরক্ষণে জোর দিতে পরামর্শ দিয়েছেন। এতে বাংলাদেশে জলজ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বিষয়টি দিন দিন জোরদার হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রাণীবিদরা। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বদ্ধপরিকর। তবে এটিও বিবেচ্য, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ভুমিকা লোকাল কমিউনিটি বা স্থানীয় জনসাধারণের সম্পৃক্তরা বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকর্মী ও সংস্থাগুলো। তাই সাগরের ডলফিন, তিমি ও হাঙ্গরের মতো বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জেলেদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং তাদের সমন্বয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে সংরক্ষণ টিম গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন প্রাণীবিদরা।

বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ বলেনন, “ডলফিনসহ সব জলজ প্রাণী যেহেতু জেলেদের জালে বা তাদের দ্বারা আটক হয়, তাই জেলেদের সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই। এজন্য প্রয়োজনে তাদের নিয়ে কর্মশালা আয়োজন করা বা মৎস্যজীবীদের সমিতিগুলোর সমন্বয়ে জালে আটকে যাওয়া জলজ প্রাণীদের বৈজ্ঞানিক উপায়ে মুক্ত করার প্রশিক্ষণ দিলে এ ঘটনা রোধ করা সম্ভব।”