প্রকৃতি ও মানুষের যে উপকার করে ব্যাঙ

ব্যাঙ। ছবি: আদনান আজাদ আসিফ, বন্যপ্রাণী গবেষক, বাংলাদেশ।

প্রকৃতির নানা বার্তা যেমন বহন করে ব্যাঙ, তেমনি রক্ষা করে কৃষকের ফসলও। পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশে কমায় ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ। এতে নানা রোগব্যাধী থেকে মুক্ত থাকে মানুষ। এজন্যই যুগ যুগ ধরে প্রকৃতি ও মানুষের উপকারি বন্ধু ব্যাঙ। কিন্তু মানুষের নানা কর্মকাণ্ডে প্রকৃতিতে কমছে ব্যাঙ। ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়েছে কয়েক প্রজাতির ব্যাঙ।

বহু যুগ আগে ব্যাঙের ভাষা বুঝতে পেরেছিলেন প্রাচীন জ্যোতিষী খনা। নিজ বচনে বলেছিলেন, “ব্যাঙ ডাকে ঘ্যাঙর ঘাঙ, শীগ্রই হবে বৃষ্টি জান”। অর্থ্যা ব্যাঙকে অনুসরণ করে বৃষ্টির আগাম বার্তা পাওয়া যায়।

প্রকৃতিতে ভারসাম্য রক্ষা করে ব্যাঙ। জমির জন্য ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ খেয়ে ফসল সংরক্ষণে ভূমিকাও রাখছে ব্যাঙ। ব্যাঙ নিজ শরীরের কয়েক গুণ পোকা এক রাতেই খেতে পারে। মশা দমনেও ব্যাঙের জুড়ি মেলা ভাঁড়। তাই খাদ্যশৃঙ্খল ও বাস্তুতন্ত্রে ব্যাঙের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। মশাবাহিত রোগের বাহক মশার লার্ভা ব্যাঙাচি অবস্থায় খেয়ে থাকে ব্যাঙ। যা প্রাকৃতিকভাবে দমন করে মশা।

তবে মানব জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে কমছে ব্যাঙের সংখ্যা। আর দূষণের কারণে নষ্ট হচ্ছে প্রাণীটির আবাস ও প্রজনন ক্ষেত্র। ফলে নিয়ন্ত্রণহীন হচ্ছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা। এ কারণে ব্যাঙ সংরক্ষণে প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল পালিত হয় ‘বিশ্ব ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস’। যার মাধ্যমে ব্যাঙ রক্ষার সচেতনতা বাড়াতে নানা আয়োজন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মো. মাহাবুব আলম বলেন, একটি ইন্ডিয়ান বুল ফ্রগের ওজন ২০০ গ্রাম এবং জীবনকাল সাত বছর। এরা নিজ দেহের ওজনের দ্বিগুণ পোকামাকড় খেয়ে থাকে।

“হিসেব করলে পুরো জীবনে ব্যাঙটি (২০০*২*৭)= ২ কেজি ৮০০ গ্রাম পোকামাকড় খায়। যদি ২ কেজি ৮০০ গ্রামে ২৮০০ পোকামাকড় হয় এবং প্রত্যেকে পাঁচ কেজি ফসল নষ্ট করে, তাহলে, ২৮০০*৫ = ১৪ হাজার কেজি ফসল নষ্ট করে। গড়ে এক কেজি ফসলের দাম ৩০ টাকা করে হলে, ১৪০০০*৩০ = ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার ফসল পুরো জীবনে রক্ষা করে একটি ব্যাঙ,” যোগ করেন মাহাবুব আলম।

“জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্পায়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে বিশ্বে ব্যাঙের আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। এতে প্রাণীটি আজ সংকটাপন্ন। আবাসস্থল সংরক্ষণ ও পরিবেশ দূষণ কমাতে পারলে সংরক্ষণ করা যাবে ব্যাঙসহ প্রাণীদের সঙ্গে জড়িত সকল জীববেচিত্র্যকে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে,” প্রাণীবিদ ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রেজা খান বলেন, ব্যাঙ আহরণ ও পাচার বন্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।

বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ব্যাঙ পরিবেশের অন্যতম একটি নির্দেশক। প্রাণীটির সঠিক বিস্তৃতি ও উপস্থিতি পরিবেশের সুস্থতা নির্দেশ করে। সৃষ্টিকর্তা সকল উদ্ভিদ-প্রাণী মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন। তাই মানুষের প্রয়োজনে ব্যাঙ সংরক্ষণ জরুরি।