
বাংলাদেশের অন্য কোথাও দেখা না গেলেও যশোর জেলার কেশবপুরে রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক কালো মুখ হনুমানের বসবাস। এই হনুমানটির কারণেই ব্রিটিশ আমল থেকে কেশবপুর উপজেলা হনুমান পল্লী হিসেবেও পরিচিত। তবে খাবার ও অভয়ারণ্যের অভাবে শ্রীরামচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ অনুচর এককালের গ্রেট মাঙ্কি বলে খ্যাত হনুমানেরা এখন আর ভালো নেই।
জানা গেছে, কেশবপুরের পশু হাসপাতাল, বক্ষকাটি, রামচন্দ্রপুর, বালিয়াডাঙ্গা, মধ্যকূল ও ভোগতী গ্রামে এদের বিচরণ বেশি। বিশ্বের একমাত্র বাংলাদেশের কেশবপুরে ও ভারতের নদীয়া জেলাতে এ কালো মুখ ভবঘুরে হনুমানের বসবাস।
কথা বলতে না পারলেও কালো মুখ হনুমানদের অনুভূতি শক্তি প্রায় মানুষের কাছাকাছি। এই হনুমানের রয়েছে মানুষের মত বুদ্ধি, রাগ-অভিমান কিংবা অভিযোগ। তাই কেশবপুরের মানুষের সঙ্গে এদের সখ্যভাব। এরা মানুষের কাছ থেকে বাদাম, কলা, রুটি ইত্যাদি নিয়ে খায়। কখনো মানুষকে বিনোদনও দেয়। আবার কখনও মানুষ উত্যক্ত করলে হিংস্রও হয়ে ওঠে।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে এই হনুমানের জন্য যে খাবার বরাদ্ধ দেয়া হচ্ছে তা অত্যন্ত অপ্রতুল। তাই জীবন বাঁচাতে খাবারের জন্য এদিক সেদিক ছুটে বেড়াতে হচ্ছে কালো মুখ হনুমানদের। যা তাদের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। হনুমানদের শীত নিবারণের ব্যবস্থা যেমন নেই, তেমনি নেই প্রজনন আর গর্ভকালীন নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় বনাঞ্চল। চাহিদা অনুযায়ী খাবার না পেয়ে ক্রমেই হিংস্র হয়ে উঠছে হনুমানেরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অভয়ারণ্যের অভাবে প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়াতে কেশবপুরের হনুমানের সংখ্যা দিন দিন কমছে। কালো মুখ হনুমান এখন ক্ষুধার তাড়নায় মানুষের ঘর, দোকান থেকে কলা-রুটি নিয়ে যায়, সবজি খেত নষ্ট করে। আর এই সুযোগে এক শ্রেণির ব্যক্তি এদের নির্মমভাবে নির্যাতন করে।
কেশবপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা আব্দুল মোনায়েম হোসেন জানান, কেশবপুর শহর ও শহরতলীতে প্রায় পাঁচশ বিরল প্রজাতির কালো মুখ হনুমান রয়েছে। এরা খুব স্পর্শকাতর প্রাণী। এদের ওপর কেউ হামলা করলে এরা দলবদ্ধভাবে থানায় গিয়ে অভিযোগ জানায়।
“সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ৩৫ কেজি কলা, ২ কেজি বাদাম ও ২ কেজি পাউরুটি দেয়া হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল,” উল্লেখ করেন আব্দুল মোনায়েম।
কালো মুখ হনুমান সাধারণত লম্বায় ২৪-৩০ ইঞ্চি এবং উচ্চতায় ১২-২০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ প্রজাতির হনুমান ৫ বছর বয়স থেকে ৬ মাস অন্তর বাচ্চা প্রসব করে। এদের গড় আয়ু ২০-২৫ বছর। শারীরিক ওজন ৫-২৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। মুখের ন্যায় হাত ও পায়ের পাতা কালো। চলাফেরার সময় এরা লেজ উঁচু করে চলে। গাছের ডালে বসলে এরা লেজ ঝুলিয়ে দেয়। পেঁপে, আম, কলা, সফেদা, মূলা, বেগুন, শাকসবজি, কচিপাতা, বাদাম ইত্যাদি প্রিয় খাবার।