‘জলবায়ু পরিবর্তনে বহুমাত্রিক হুমকির মুখে বাংলাদেশ’

ছবি: বেঙ্গল ডিসকাভার

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সকল দেশের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বুধবার রাতে স্পেনের মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ২৫তম জলবায়ু সম্মেলনে এক পার্শ্ব সম্মেলনে একথা বলেন তিনি। এটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ, কোরিয়া ও জাপান।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের নিষ্পাপ শিকার। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বাংলাদেশের মাথাপিছু কার্বন নি:সরণের হার মাত্র দশমিক পাঁচ টন। আর উন্নত দেশগুলোর মাথাপিছু গড় কার্বন নি:সরণ ছয় টন। দায়ী না হয়েও বাংলাদেশ সীমিত সম্পদ নিয়ে নিজ উদ্যোগে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সারাদেশে ৫০ লাখেরও বেশি সোলার সিস্টেম স্থাপন করেছে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশে এখন দৃশ্যমান। সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। দেশের কোথাও কোথাও মরুকরণ দেখা দিয়েছে। সম্ভাবনার চেয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কম হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের পানির প্রধান উৎস হিমালয়ের বরফ দ্রুত গলছে। ফলে বাংলাদেশ এখন জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমাত্রিক হুমকির মুখে।

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশগুলোও জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে। সে সকল দেশে মরুকরণেরও সুযোগ নেই। তাছাড়া এসকল দেশের জনসংখ্যা কম। কিন্তু বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। শুধু উপকূলীয় অঞ্চলেই ৪২ মিলিয়ন জনগণ বসবাস করে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিধ্বংসী প্রভাবে বাংলাদেশ অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ক্লাইমেট চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক পার্শ্ব সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ

সীমিত সম্পদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই অগ্রপথিক। বাংলাদেশ সবার আগে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ‘এ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করেছে। নিজস্ব বাজেট থেকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে ৭২০টি অভিযোজন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র দেশ। কিন্তু জনসংখ্যা বেশি। আমাদের অগ্রাধিকার খাত হচ্ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের কারণে আমরা অগ্রাধিকার খাতের দিকে নজর দিতে পারছি না। অথচ উন্নত দেশের ভোগ-বিলাসের কারণে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদাপন্ন দেশ।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বহু প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ডাইনোসারের মতো প্রাণীও বিলীন হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। কিন্তু আমরা টিকে থাকতে চাই। আমাদের টিকে থাকার জন্য অনেক দেশই তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করছে না। আবার কোন কোন দেশ পৃথিবীর রক্ষাকবচ হিসাবে পরিচিত প্যারিস-চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। এটা আমাদের জন্য হতাশাজনক।

মন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা ইতোমধ্যে এক ডিগ্রী বেড়ে গেছে। বর্তমানে হারে কার্বন নির্গমন হতে থাকলে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে ৩ ডিগ্রী ছাড়িয়ে যাবে। অথচ এক ডিগ্রী তাপমাত্রা বৃদ্ধির ভয়ানক পরিণতি এখন পৃথিবী দেখছে। এই তাপমাত্রা তিন ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে পৃথিবীর অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে। এই অবস্থায় সব দেশকে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সব দেশের সমন্বিত উদ্যোগ চাই।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মির্জা শওকত আলী। আলোচনা করেন দুই সংসদ সদস্য জাফর আলম ও রেজাউল করিম, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আহমেদ কায়কাউস, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূরুল কাদের। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে অভিযোজন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তাকারী দেশ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিরা তাদের কার্যক্রম তুলে ধরেন।