যে কারণে মানুষকে পিষে মারছে বনের হাতি

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার, চকরিয়া, বান্দরবান, আনোয়ার ও বোয়ালখালীসহ আশপাশের এলাকায় নিয়মিত চলাচল করে বন্যহাতি। কিন্তু এ অঞ্চলের সংরক্ষিত বনগুলোতে গাছ নিধন, পাহাড়ে পাথর ও মাটি উত্তোলনসহ হাতি চলাচলের পথে লোকালয় গড়ে তোলাতে সংকুচিত হয়েছে হাতির আবাস্থল। সম্প্রতি এসব এলাকায় বেড়েছ হাতি-মানুষ সংঘর্ষও। এজন্য মানুষ দ্বারা বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যগুলো বিনষ্ট করাকেই দুষছেন গবেষকরা।

বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যগুলো উজাড় হওয়াতে গত কয়েক বছরে অন্য সময়ের তুলনায় শীত মৌসুমে চরম খাদ্য সংকটে পড়ছে বন্যহাতিরা। এতে প্রতি বছর শীতের শুরুতেই খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে বন্যহাতি পাল। এতে রোপণ করা কলাসহ ফলজসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, ক্ষেতের পাকা ধান খেয়ে থাকে হাতির পাল।

পাশাপাশি বসতবাড়ি গুড়িয়ে দেয়াসহ বাড়ছে মানুষ-হাতি সংঘর্ষ। ফলে মানুষের হামলায় মারা পড়ছে বন্যহাতিও। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের পরিসংখ্যান মতে, গত এক বছরে শিশু, নারী-পুরুষসহ অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ বন্যহাতির আত্রুমণে আহত-নিহত হয়েছেন। যারা পাহাড়ি বাসিন্দা, কৃষক ও পাহারাদার।

জানা গেছে, সম্প্রতি বোয়ালখালী ও আনোয়ারায় লোকালয়ে হানা দিচ্ছে কয়েকটি বন্যহাতির পাল। এতে বোয়ালখালী জৈষ্ঠ্যপুরা আমুচিয়া এলাকায় হাতি গাছপালা, ক্ষেত ও খামার হানা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এতে আতঙ্কিত এলাকাবাসীরাও। গেল ২৪ নভেম্বর বোয়ালখালী উপজেলা কধুরখীল, চাদেরহাট, খরনদ্বীপ এলাকায় হাতির পায়ে পৃষ্ট হয়ে তিনজন মারা গেছে। এরপর দিন জঙ্গল আমুচিয়ার বড়খীল এলাকাতে আরো একজন মারা যায়।

কয়েক মাস আগে আনোয়ারায় অবস্থিত বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি এলাকায় একটি বন্যহাতি পাল হানা দেয়ার অভিযোগ করে স্থানীয়রা। বন্যহাতির পালটি এখনো আনোয়ার কোরিয়ান ইপিজেট এলাকার বনে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন ইপিজেট নিরাপত্তাকর্মী মো. আলী। লোকালয়ে বন্যহাতির পাল আসার বিষয়টি বনবিভাগকে জানানো হয়েছে বলে বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেছেন বোয়ালখালী ইউএনও আছিয়া খাতুন।

এদিকে স্বাস্থ্যসম্মত আবাস ও খাবার সংকটে নানা রোগ-ব্যাধিতে আত্রুান্ত হচ্ছে বন্যহাতিরাও। অসুস্থ হয়ে গেল এক মাসে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, চকরিয়া ও লামা এলাকার পাহাড় ও লোকালয়ে অন্তত পাঁচটি বন্যহাতি মারা গেছে। এজন্য অবৈধ ইটভাটার কারণে পরিবেশগত বিপর্যয়ের ফলে বন্যহাতিরা নানা রোগে আত্রুান্ত হচ্ছ বলে মনে করছেন বন্যপ্রাণী গবেষকরা।

সম্প্রতি বন্যহাতি মারা যাওয়ার কারণ নির্ণয়ে মৃত হাতির মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। নমুনাগুলো পরিক্ষা-নিরিক্ষার জন্য ঢাকায় ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে বলেন জানিয়েছেন সাফারি পার্কের ভেটেরিনারী সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান।

তবে হাতি নিয়ে গবেষণা করা নাসির উদ্দিন বেঙ্গল ডিসকাভার-কে জানান, বন্যহাতিরা খাবার জন্য বেশি সমস্যায় পড়ছে। এজন্য পাহাড়ি বন উজার, জনবসতি বেড়ে যাওয়া অন্যতম কারণ। এতে হাতিরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারছে না।

“মূলত বন্যহাতি জন্মের পর থেকে যে পথ ব্যবহার করে থাকে, ওই পথে মৃত্যু আগ পর্যন্ত চলাচল করে থাকে। যা মানুষ দিন দিন নষ্ট করে ফেলছে,” উল্লেখ করেন গবেষক নাসির উদ্দিন।

তিনি বলেন, পাহাড়ে মানুষ যত্রতত্র লোকালয় গড়ে তুলাতে হাতির জন্য যতটুকু বন দরকার তা আর নেই। এতেই বন্যহাতিরা খাবার সংগ্রহের জন্য লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। তাই হাতি চলাচলের পথ চিহ্নিত করাসহ প্রাণীটির আবাস ও খাবার সংরক্ষণে বনভূমি রক্ষার উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন হাতি গবেষক নাসির উদ্দিন।