
বাংলাদেশের বাজারে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাস্তরিত তরল দুধে আবারো অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি গবেষকদের।
প্রথম গবেষণার পর এবার ২য় দফায় পরীক্ষা-নিরিক্ষার পরও চিত্র একই বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।
শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২য় দফা পরীক্ষায় বাজার থেকে ১০টি নমুনা নিয়ে ১০টিতেই অ্যান্টিবায়োটিক সনাক্তের তথ্য জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ফারুক।
এছাড়া গবেষণা নিয়ে কোনো চক্রান্ত না খোঁজার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা একই গবেষক দল একই জায়গা থেকে একই কোম্পানির নমুনা সংগ্রহ করে একই যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করেছি। ফলাফল আগের মতোই উদ্বেগজনক ছিল।
পার্থক্য শুধু প্রথম দফায় পাওয়া গিয়েছিল তিনটি অ্যান্টিবায়োটিক, এবার চারটি।” গেলো ২ জুলাই থেকে দ্বিতীয় দফার পরীক্ষা চালানো হয় বলে জানান ফারুক।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গত সপ্তাহে আমরা এই পরীক্ষাটি পুনরায় সম্পন্ন করেছি। প্রথমবারের মতো এবারও পূর্বোক্ত পাঁচটি কোম্পানির সাতটি পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের একই জায়গা থেকে সংগৃহীত নমুনা এবং একই জায়গা থেকে খোলা দুধের সংগৃহীত ৩টি নমুনা, অর্থাৎ সর্বমোট ১০টি নতুন নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি একই নিয়মে একই উন্নত ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়।
“ফলাফল আগের মতোই উদ্বেগজনক। এবারও অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্ত করা গেছে সবগুলো নমুনাতেই। অ্যান্টিবায়োটিকের মোট সংখ্যা ছিল ৪টি (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং লেভোফ্লক্সাসিন)।
এর মধ্যে আগেরবারে ছিল না এমন অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ২টি (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন),” উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
আরো বলা হয়, ১০টি নমুনার মধ্যে তিনটিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে চারটি, ছয়টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে তিনটি এবং একটিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে দুটি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, “আমরা ভবিষ্যতেও এই পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষাগুলোর ফলাফল জনস্বার্থে প্রকাশ করার চেষ্টা করব।”
এর আগে গত ২৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের এই অধ্যাপক গণমাধ্যমকে জানান, বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষায় মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি রয়েছে।
পাস্তরিত দুধে ক্ষতিকর উপাদান সনাক্ত করার তথ্য প্রকাশের পরই দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান গবেষণাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেন। পরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরও গবেষণাটি নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
সরকারি কর্মকর্তাদের পাশে রেখে সংবাদ সম্মেলনে দুগ্ধ ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, এই গবেষণা দেশের দুগ্ধ শিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক।
এরপর শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে ওই গবেষকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন।
ষড়যন্ত্রের অভিযোগ নাকচ করে অধ্যাপক ফারুক শনিবার বলেন, “জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগজনক এই সমস্যাটি সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার পরিবর্তে বিশেষ কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে আর বিদেশি চক্রান্ত খুঁজতে হবে না।”