ফের চট্টগ্রামের সৈকতে লাল কাঁকড়া!

বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পারকি সমুদ্র সৈকতে লাল কাঁকড়া। ছবি: বেঙ্গল ডিসকাভার

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত নতুন করোনা মহামারীতে থমকে আছে বাংলাদেশেও। এতে ঘরবন্দি মানুষ, কোলাহলমুক্ত প্রকৃতিও। তাই তো অন্যান্য সময় এ দেশের সাগর সৈকতে যখন পিঁপড়ের মত মানুষের যে ঢল নামতো, এখন সেখানে শুধুই নীরবতা… ফলে বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদ ও  প্রাণীরা আবারো ফিরছে প্রকৃতিতে।

প্রায় ১৫ বছর আগেও এ দেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের বঙ্গোপসাগর পাড়ের পারকি সৈকত জুড়ে বিচরণ করতো লাল কাঁকড়া। সাদা দুটি লম্বা চোখ, উপরে এন্টেনার মতো লাল দুটি অংশ। সৈকতের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত, সবখানেই ছিল কাঁকড়াগুলোর ছুটোছুটি। সঙ্গে দেখা যেত আরো নানা প্রজাতির ছোট কাঁকড়াও।

তবে দিনবদলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়ে পারকি সৈকতে বাড়তে থাকে পর্যটক। এতে নিজেদের লুকিয়ে ফেলতে শুরু করে লাল কাঁকড়া। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকত পাড়ের বাসিন্দারা জানান, বহু বছর ধরে দেখা যায়নি লাল কাঁকড়া। কিন্তু করোনার লকডাউনে নিস্তব্দ বালুময় সৈকতে পর্যটকদের আনাগোনা না থাকায় ফের খেলা করছে লাল কাঁকড়ার দল।

আনোয়ার বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ বলেন, ”গত ১৪-১৫ বছরের মধ্যে পারকি সমুদ্র সৈকতে এই লাল কাঁকড়া দেখা যায়নি। তবে এর আগে আমাদের ছেলেবেলায় প্রায়ই লাল কাঁকড়া দেখেছি। কিন্তু ধীরে ধীরে সেগুলো এখান থেকে নাই হয়ে গেছে।”

”গত কয়েকদিন ধরে দেখছি স্থানীয় কিছু যুবক লাঠি দিয়ে কাঁকড়াগুলো মেরে নিয়ে যাচ্ছে। গেল শুক্রবার সন্ধ্যায় পর সৈকতে এসে দেখতে পাই কয়েকটি ছেলে কাঁকড়া মেরে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের ধাওয়া দিয়ে ধরার চেষ্টাও করেছি, কিন্তু দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এভাবে মারতে থাকলে এ কাঁকড়াগুলো আবারও হারিয়ে যাবে,” ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন কাইয়ুম শাহ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া জানান, এক সময় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সাগর সৈকতে লাল কাকড়া প্রচুর দেখা যেত। আমরা নিজেরাও কক্সবাজার এ কাঁকড়া দেখেছি। চরের পর চর কাঁকড়ায় লাল হয়ে থাকতো। যা এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তবে সোনাদিয়া দ্বীপে এখনো প্রচুর লাল কাঁকড়া আছে।

”মানুষের আনাগোনা বিচে যানবাহন চালানো ও অতিরিক্ত মানুষের পদচারণার কারণে লাল কাঁকড়া বিপন্ন হওয়ার পথে। এই প্রাণীটি খুবই স্পর্শকাতর। মানুষ কাছে গেলেই এগুলো গর্তে ঢুকে যায়। মানুষের আনাগোনা না থাকলে গর্ত থেকে বের হয়ে ঘুরে বেড়ায় এরা,” উল্লেখ করেন মঞ্জুরুল কিবরিয়া।

তিনি বলেন, ”কুয়াকাটা, কক্সবাজার ও পারকিসহ দেশের বিভিন্ন সাগর সৈকতে বহু লাল কাঁকড়ার বিচরণ ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর এই সময়ে মানুষের যাতায়াত বন্ধ থাকায় লাল কাঁকড়া আবার দেখা যাচ্ছে।”