ঘড়িয়াল, মিঠাপানির কুমির প্রজাতির সরীসৃপ। এক সময় ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার আর ভুটানে অহরহ দেখা যেতো। কিন্তু বর্তমানে ঘড়িয়াল উপমহাদেশে বিপন্ন প্রাণী। ইতিমধ্যেই প্রকৃতি সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক-আইইউসিএন-এর বিপন্নপ্রায় প্রাণীর লাল বইয়ে স্থান করে নিয়েছে ঘড়িয়াল। বিশ্বে প্রাকৃতিক পরিবেশে ২০০টির মতো বুনো ঘড়িয়াল আছে বলে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছিল সংস্থাটি।
ভারতীয় ভূখন্ডে ঘড়িয়াল খুব পরিচিত নাম। চার থেকে সাত মিটার দৈর্ঘ্যের সরীসৃপ প্রাণীটির স্বভাব হিংস্র নয়। সংকীর্ণ চোয়ালের এ প্রাণীটির প্রধান খাদ্য মূলত নদীর মাছ। তাই এদের মেছো কুমিরও বলা হয়। যমুনা, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রসহ একাধিক নদীতে আগের মতো আর অস্তিত্ব নেই ঘড়িয়ালের। তবে এক দশক পর করোনার লকডাউনের সময় ভারতের যমুনা নদীতে দেখা যায় প্রাণীটিকে।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বন-আধিকারিক সুশান্ত নন্দের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি প্রকাশ করেন। সেটিতে দেখা যায়, যমুনার তীরে বেশ কয়েকটি ঘড়িয়াল শাবক খেলা করছে। এ ছবি নিয়ে উচ্ছ্বসিত পরিবেশবিদরা। কারণ ২০১১ সালে শেষ যমুনায় দেখা মিলেছিল প্রাণীটি। আর গত বছর দশেকের মধ্যে আর কেউ দেখেনি ঘড়িয়াল।
নদীর গতিপথের বিপরীতে ৩০ কিলোমিটার দূরে ডিমও দিয়েছিল ঘড়িয়াল। সেই ডিম ফুটেই জন্ম নিয়েছে কয়েকটি শাবক। তবে গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, ইতিমধ্যেই দুটি শাবক মারা গেছে। তবে বাকিগুলো সুস্থ রয়েছে। যমুনার তীরে এসে মাঝেমধ্যেই জানান দিচ্ছে তাদের উপস্থিতি।
প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত মার্চ মাস থেকেই লকডাউনের পথ বেছে নেয় ভারত সরকার। ফলে বন্ধ ছিল দেশের প্রায় সব কলকারখানাগুলো। বন্ধ হয়েছিল পরিবহন-সহ মানুষের অন্যান্য কার্যকলাপও। ফলে কমে এসেছিল দূষণ। যা প্রকৃতির জন্য আর্শিবাদ হয়ে এসেছিল বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা। এতে স্বচ্ছ হয়ে উঠছিল একাধিক নদী। গত এপ্রিলে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্রের পাশাপাশি অতি-দূষিত যমুনাতেও ঝকঝকে পানির স্তর দেখা গিয়েছিল। ফিরে এসেছিল পাখির দল এবং নানান প্রজাতির মাছও।