সিলেটে বন্যপ্রাণীর প্রতি এ কেমন নিষ্ঠুরতা?

সিলেটের জৈন্তাপুরে হত্যা করা প্রাণী (বামে), সুনামগঞ্জে হত্যা করা প্রাণী (ডানে)।

বাংলাদেশের সিলেট জেলায় বন্যপ্রাণীর প্রতি দুটি অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। যা পরিবর্তন করে দিয়েছে নিষ্ঠুরতার সংজ্ঞাও। প্রথম ঘটনা ঘটে ২৬ জুন, জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বালিপাড়া গ্রামে। এদিন অন্তত ছয়টি শেয়াল, দুটি বাগডাশা ও একটি বেজিকে নির্মমভাবে হত্যা করে স্থানীয় বাসিন্দারা। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ২৯ জুন, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নে। বন্যাকবলিত এলাকাটিতে একটি গন্ধগোকুলকে নির্মম কায়দায় হত্যা করা হয়।

প্রথম ঘটনার বিবরণ, ফতেহপুর ইউনিয়নের টিলা বেষ্টিত ঝোপঝাড়ে ও মাটির গর্তে বাস করতো বন্যপ্রাণীগুলো। যদিও প্রাণীগুলো কোন মানুষের ক্ষতি করেনি। কিন্তু শুক্রবার একদল গ্রামবাসী প্রাণীগুলোর আবাস্থলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এতে ধোয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হলে প্রাণীগুলো গর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি, গর্তের মুখে লাঠি হাতে থাকা মানুষেরা জাল এবং রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে প্রাণীগুলোকে। যেসব প্রাণী পালাতে চেষ্টা করেছিল, সেগুলোকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

জানা গেছে, সিলেট অঞ্চলে বর্ষার পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে গ্রামের উঁচু স্থানে এসে আশ্রয় নিচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। এতে প্রতিদিন লোকালয়ে এসে হাঁস-মুরগি শিকার করে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬ জুন সকালে পাশের জঙ্গলে দেয়। এ সময় নয়টি প্রাণী হত্যা করে তারা, পরে আনন্দিত হয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট দেয় হত্যাকারীদের কয়েকজন।

নৃশংস এ ঘটনায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ আইনে মামলা করেছে বাংলাদেশ বনবিভাগ। মামলার বাদী বন কর্মকর্তা সাদ উদ্দিন বলেন, শনিবার সকালে জৈন্তাপুরের ফতেহপুর ইউনিয়নের বালিপাড়া গ্রামে তদন্ত করা হয়। বনবিভাগরে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্তে নয়টি প্রাণী হত্যার প্রমাণ মিলেছে। হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত দুজনকে শনাক্তও করা হয়েছে।

”বালিয়াপাড়া গ্রামেরই যুবক আব্দুল হালিম ও শাহারিয়ার আহমদসহ ১০/১১ জন যুবক মিলে ছয়টি শিয়াল দুটি বাগডাশা ও একটি বেজি লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে প্রাণীগুলোর মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়,” উল্লেখ করেন বন কর্মকর্তা সাদ উদ্দিন।

বাংলাদেশের প্রাণ-প্রকৃতি সাংবাদিক হোসেন সোহেল জানান, বছরের মে-জুনের সময়কালে প্রকৃতির নানান স্তরের প্রাণীকূলের প্রজনন ঘটে। পরের একটি প্রজন্মের আগমনের আগে মানুষের এমন নিষ্ঠুরতায় বিলুপ্তির মুখে পড়তে যাচ্ছে বেজি, শিয়াল ও বাগডাশার মতো প্রাণীরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা’র সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ”সোশ্যাল মিডিয়াতে বন্যপ্রাণীগুলো হত্যার বিষয়টি ভাইরাল হলে প্রশাসন এবং বনবিভাগ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। এমন প্রতিবাদেই প্রতীয়মান হয় যে মানুষ অনেকটাই সচেতন হয়েছে। তবে দু:খের বিষয় গ্রামে এখনো তেমন সচেতনতা তৈরি হয়নি।“

দ্বিতীয় ঘটনার বিচরণ, ২৯ জুন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের রামপুরে একটি গন্ধগোকুলকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও এলাকাটিতে পাহাড়ি ঢলে বাড়িঘর ডুবে গেছে। এমন দুর্যোগের দিনেও একটি প্রাণীকে মেরে ফেলা হয় বলে জানান সিলেটের সাংবাদিক রিপন দে। তিনি জানান, বন্যাকবলিত এলাকাটিতে মানুষের পাশাপাশি বিপদে পড়েছে বন্যপ্রাণীও। মানুষের মতো প্রাণীটির আবাসটিও হয়তো ডুবে গেছে। কিন্তু কতিপয় মানুষ বিপন্নপ্রায় প্রাণীটিকে হত্যা করলো।