উদ্ধার হওয়া এই পাখিটি দিনে দেখা মেলা ভার!

বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলে উদ্ধার হওয়ার বাঘা বগলা পাখি। ছবি: সংগৃহীত

নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে পাখিটি। প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে ধারণ করতে পারে ভয়ঙ্কর রূপ। পালক ফুলিয়ে ও ডানা ছড়িয়ে এবং মাথার মুকুট খাড়া করে বল্লমের মতো ঠোঁট দিয়ে আঘাত করে। শরীরে ডোরাকাটা ও স্বভাব অনেকটাই বাঘের মতো হওয়াতে পাখিটির নাম বাঘা বগলা।

বাংলাদেশে যত পাখি দেখা যায় এরমধ্যে সবচে বেশী বিরল বাঘা বগলা। পাখির ইংরেজি নাম Great Bittern। বৈজ্ঞানিক নাম Botaurus stellaris। দিনে ঘুমিয়ে কাটায় এবং রাতে শিকারের খোঁজে বের হয় পাখিটি। এ কারণে সচরাচর মানুষের চোখে পড়ে না বাঘা বগলা।

শিকার ধরতে এরা নি:শব্দে বাঘের মতোই গা-ঢাকা দিয়ে ওত পেতে থাকে। শিকারের দিকে রাখে তীক্ষ্ণ নজর, আস্তে আস্তে এক পা দুই পা হেঁটে আবার স্থির হয়। হুট করেই শিকার বুঝে ওঠার আগেই আক্রমণ করে বসে। সাপ, ব্যাঙ, গিরগিটি আর নিশাচর কীটপতঙ্গ শিকার করতে অভিজ্ঞ পাখিটি। ঘাসের প্রান্তরে আর ঝোপঝাড়ের আড়ালে বাসকরা কালো ডোরাকাটা খয়েরি পালকের নিশাচর পাখিটি সহজে দেখা যায় না।

তবে গেল বৃহষ্পতিবার রাতে বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়ন থেকে একটি বাঘা বগলা পাখি উদ্ধার হয়। বর্তমানে পাখিটি রাখা আছে শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনে। ফাউন্ডেশনটির পরিচালক সজল দেব জানান, রাতের বেলা মাছ খেতে গিয়ে ফাঁদে আটকা পড়ে পাখিটি। পরে এটিকে উদ্ধার করা হয়। মুখে একটু আঘাত পেয়েছে। সুস্থ হলে পাখিটি প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।

সবশেষ প্রায় ১০ বছর আগে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউরা চা বাগানে দেখা মিলেছিল একটি বাঘা বগলা। সে সময় পাখিবিদ পল থমসনকে সঙ্গে পাখিটি দেখেন বাংলাদেশ বার্ড-ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পাখিবিদ ইনাম আল হক। সেই বাঘা বগলা পাখিটি সনাক্ত করার পর হাইল হাওরে অবমুক্ত করা হয়। এরপর আর কোথাও পাখিটি দেখার তথ্য পাননি বলে জানান ইনাম আল হক।

“বাংলাদেশে মোট পাঁচ প্রজাতির বগলা পাখি আছে। এরমধ্যে সবচে বেশি বিরল বাঘা বগলা। শীতে আমাদের দেশে আসে, গ্রীষ্মে আবার চলে যায়,” বলেন পাখিবিদ ইনাম আল হক। পাখিটির স্বভাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রাতে চলাচল করে এবং অন্যপ্রাণীদের এড়িয়ে চলে বাঘা বগলা। তবে হঠাৎ মুখোমুখি হলে ভয়ে পালায় না, উল্টো ভয় দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে দিকে বাঘের মত তেড়ে আসে।

ইনাম আল হক বলেন, “বাংলাদেশের একমাত্র হাওর অঞ্চলে থাকতে পারে পাখিটি। তবে দিনে দেখা না যাওয়ার কারণে এদের অস্তিত্ব জানা কঠিন। শীতের শেষে ইউরোপে চলে যায়। এদের প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুনে। পাখিটির গত ওজন দেড় কেজি । তবে অন্য বকের মত পা বেশি লম্বা নয়।”