দেশে প্রায় ৩০ বছর ধরে মাশরুম উৎপাদন চললেও এখনো লাভজনক পণ্য হিসেবে গুরুত্ব পায়নি। তবে এজন্য হতাশায় নেই চাষিরা। অব্যাহত রেখেছেন চাষাবাদ। বিশেষ করে পাহাড়ে এখন জনপ্রিয় এই কৃষিজ পণ্য চাষ। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের বেশিরভাগ বাসিন্দা জুম বা ফলের চাষের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় করছেন মাশরুম চাষ।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ, মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্র, বেসরকারি এনজিও বা যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাণিজ্যিক আকারে করছেন মাশরুম চাষ। তেমনই একজন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়েছেন রাঙামাটির জেলা শহরের রাঙাপানি এলাকার বাসিন্দা পলাশ কুসুম চাকমা। যিনি আবার সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যানও।
গেল দু’বছর ধরে পরিবারিকভাবে মাশরুম চাষ করছেন পলাশ কুসুম চাকমা। যা আর্থিক স্বচ্ছলতাও এনেছে তার জীবনে। তিনি বলেন, পাহাড়িরা প্রকৃতভাবে চাষাবাদ নির্ভর জাতি। সারা বছর জুমচাষ, ফলের চাষ, শুকর পালন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে। পাশাপাশি পাহাড়িদের জনপ্রিয় একটি খাবার মাশরুম। প্রতিদিন বাজার করার সময় মাশরুম কিনে আনেন অনেক পরিবার।
পলাশ কুসুম জানান, শখের কারণে বাড়ির খালি জায়গায় মাশরুম চাষ শুরু করেন। তবে অল্প জায়গায় ভালো উৎপাদন হওয়াতে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষের সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য স্থানীয় মাশরুম কেন্দ্র থেকে নেন ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ২০১৬ সালের শেষদিকে বাড়ির পাঁচ শতাংশ জায়গায় শেড দিয়ে গড়ে তোলেন মাশরুম চাষ কেন্দ্র। ঘর নির্মাণ ছাড়া মাশরুম চাষে পুঁজি ছিল ৫০ হাজার টাকা। উৎপাদনের প্রথম ধাপেই আয় হয় দেড় লাখ টাকা।
পলাশ কুসুমের মতে, উন্নতজাতের মাশরুমের বীজ সংগ্রহ করা হয় স্থানীয় সরকারি মাশরুম সেন্টার থেকে। তিনি জানান, বছরে এখন তার তিন লাখ টাকা আয় হয়। এই আয় থেকে সোনালী জাতের মুরগির খামারও গড়ে তুলেছেন। এছাড়া রাঙামাটি শহরের রাঙ্গাপনি এলাকায় অপর এক মাশরুম চাষী সুভাষ চাকমা। মাশরুম থেকে বছরে তার আয় প্রায় দুই লাখ টাকার মতো।
রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, গুণাগুণ এবং সবজি হিসেবে মাশরুম যে এক অনন্য খাবার হতে পারে তা প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে মানুষের মাঝে এখনো ছড়াতে সম্ভব হয়নি। আর বাণিজ্যিক এবং সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। যা মাশরুম চাষ জনপ্রিয়তা করার অন্তরায়।
তিনি জানান, কৃষি বিভাগ ঘরে ঘরে ব্যাপক হারে মাশরুম উৎপাদনের প্রচারণা চালাচ্ছে। পাশাপাশি বাণিজ্যিক নানান অসুবিধা দূর করা সংরক্ষণের উপায় বের করতেও কাজ চলছে বলে উল্লেখ করেন হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া।