‘নদীপ্রেমী পর্যটকরা’ দূষিত করছেন হালদা নদী!

হালদা নদী পাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান ও দূষণের চিত্র। ছবি: বেঙ্গল ডিসকাভার

প্রকৃতি ও নদীর টানে প্রায়ই প্রকৃতিপ্রেমীরা ঘুরতে যান বাংলাদেশের চট্টগ্রামে প্রবাহিত এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে। কিন্তু তাদের অসচেতনতায় নদীটি এখন দূষণের মুখে। সেইসঙ্গে হুমকিতে নদীর মৎস্য সম্পদ ও জীববৈচিত্র।

ইতিমধ্যে হালদা নদী প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হতে চলেছে। হালদা নদীর সৌন্দর্য দেখতে নদী পাড়ে নির্মিত ১২ কিলোমিটারের দৃষ্টিনন্দন বেড়িবাঁধ বেড়েছে পর্যটকের আনাগোনা। নদীর রূপ দেখতে আসা পর্যটকেরা হালদায় ফেলছেন প্লাস্টিকের প্যাকেট, পলিথিন, প্লেট, গ্লাস, পানির বোতল, চিপসসহ নানা আবর্জনা।

হাটহাজারীর রামদাস চৌধুরীহাটে গেলে দেখা যায়, কয়েক শতাধিক পর্যটক নদীর পাড়ে ভিড় করেছেন। কেউ কেউ নদীতে নৌকা ভ্রমণ করছেন। যাদের বেশিরভাগেরই হাতে ছিল প্লাস্টিকের মোড়কে খাবারের প্যাকেট। খাওয়া শেষে অনেকে এসব অপচনশীল প্লাস্টিক-পলিথিন নদীতে ফেলে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন হালদা পাড়ে পরিদর্শনে গিয়ে উপস্থিত পর্যটকদের নদী দূষণ না করতে আহবান জানান। তিনি বলেন, হালদা নদীকে দূষণ মুক্ত রাখতে নদীর পাড়ে আগত পর্যটক, নদীপ্রেমীক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের নদীটিকে রক্ষায় সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

হালদা নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে ১৫টির বেশি অস্থায়ী খাবারের দোকান। এসব দোকানে বর্জ্য সংগ্রহে ডাস্টবিন না থাকায় দোকানগুলো থেকে কেনা খাবারের প্যাকেট কেনা নদীতে ফেলে দিচ্ছেন পর্যটকরা। এতে দিনদিন দূষণ বাড়ছে হালদা নদীতে।

আমিনুল ইসলাম মুন্না নামের এক পর্যটক বলেন, “হালদা নদীকে দূষণ থেকে বাঁচাতে এখানে আসা পর্যটকদের সচেতন হতে হবে। না হলে চরম ক্ষতির মুখে পড়বে হালদার অস্তিত্ব।”

“হালদা শুধু দেশের নয়, এটি বিশ্বের সম্পদ। এ নদীকে রক্ষায় আমাদের সচেতন হতে হবে। হালদা রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে,” উল্লেখ করেন রবিউল হোসেন নামের অপর এক পর্যটক।

হালদা গবেষণা সেন্টারের সমন্বয়ক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, “হালদায় প্লাস্টিক দূষণের কারণে মা মাছ, শুশক, ডলফিন মারা যাচ্ছে। আমাদের সচেতন হতে হবে। নদীতে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন চাইলে সচেতনতারমূলক সাইনবোর্ড দিতে পারে। এছাড়া হালদা দূষণরোধে নদী পাড়ে দোকানগুলোতে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া জরুরি।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন বলেন, “হালদা দূষণ রোধে নিয়মিত অভিযানসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছি।” এছাড়া স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নিয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি হালদা নদী এলাকায় অভিযান ও নজরদারি করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।