মরজাত বাওড়ের পাখি সুরক্ষায় উদ্যোগ

মরজাত বাওড়ে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক, গবেষণা ও সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান।

প্রতিবছর শীত মৌসুমে বাংলাদেশের হাওড়-বাওড়, নদী, বিল, সাগরতীর, চর, পাহাড়ি এলাকায় পাখির আগমন ঘটে বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী। এই পাখিরা রোগাক্রান্ত মাছ খেয়ে রোগ দমন করে, জলাশয়ের ক্ষতিকর জীব এবং পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ফসল উৎপাদনে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু শীতে কিছু অসাধু মানুষের লোভী দৃষ্টির শিকার হচ্ছে এ দেশের পরিবেশের বন্ধু পরিযায়ী পাখিরা।

বাংলাদেশে ১৩টি পরিবেশগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রয়েছে, যার একটি ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ থানার বারোবাজার এলাকায়, নাম মরজাত বাওড়। এই বাওড়ে প্রতিবছর শীতে আগমন ঘটে এক বিশাল সংখ্যক পরিযায়ী পাখির। একইসঙ্গে বছর জুড়ে থাকে নানা প্রজাতির জলচর পাখির মেলা।

২০১৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মাহাবুব আলমের তত্বাবধানে মরজাত বাওড়ের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা এবং এই এলাকার পাখিসহ বন্যপ্রাণী নিয়ে গবেষণা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাণীবিদ্যার শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান সমী। যা করোনাকালীন সময়েও চলমান ছিল।

গবেষণায় প্রতিমাসে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সংগ্রহ করা হয় পাখির তথ্য। তবে এ বছর শীতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত চিত্র দেখতে পান গবেষকরা। তারা জানান, বাওড়ের পশ্চিম পার্শ্বের এলাকাজুড়ে পাখির বিচরণ ক্ষেত্রে পাতা ছিল ‘ফাঁদ’। আগের বছরের তুলনায় পাখির সংখ্যাতেও ছিল তারতম্য।

গবেষণায় দেখা যায়, মরজাত বাওড়ে প্রায়ই কতিপয় সৌখিন ও বিলাসী মানুষ আসে পাখি শিকারে। শিকারে আসা বেশিরভাগই যশোর সদর, চৌগাছা, সাতমাইল ও ঝিনাইদহ থেকে আসেন বলে জানান গবেষকরা। যারা প্রভাবশালী ও পাখি শিকারকে উপভোগ করেন। তাই শিকার বন্ধে উদ্যোগ নেন গবেষকরা।

গেল ১৭ জানুয়ারি মরজাত নলভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে পাখির গুরুত্ব, মরজাত বাওড়ের জীব-বৈচিত্র্যের অবস্থা, সংরক্ষণের গুরুত্ব, বন্যপ্রাণী হত্যা বন্ধে করণীয়, পাখি-শিকার দেখলে করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও বন্যপ্রাণী প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকমন্ডলী, স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষ। এই কার্যক্রমে সহযোগিতা করে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট এবং বন্যপ্রাণী ব্যবস্থা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।

গবেষক আশিকুর রহমান সমী জানান, এ দেশে বন্যপ্রাণী বিষয়ক গবেষণায় বাড়াতে হবে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ। তিনি বলেন, আমরা গবেষণা করে ফলাফল প্রকাশ করবো, কিন্তু বন্যপ্রাণী রক্ষা করবেন স্থানীয় জনসাধারণ। তাই সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে বন্যপ্রাণীর গুরুত্ব বোঝাতে হবে। যা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।