চিড়িয়াখানা এবং একুরিয়ামে প্রাণী সংরক্ষণ বা প্রদর্শনী নিয়ে সংরক্ষণবাদীদের মধ্যে বিতর্ক নতুন নয়। সম্প্রতি বিতর্কিত এ বিষয়ে চিড়িয়াখানা ও একুরিয়ামে প্রাণী সংরক্ষণের পক্ষে মত দিয়েছেন প্রখ্যাত প্রকৃতিবিদ স্যার ডেভিড এটেনবার্গ। তার মতে, এই প্রক্রিয়ায় প্রাণীরা বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
প্রাণীবিদদের একাংশ মনে করেন, প্রাণীদের আবদ্ধ করে রাখলে তাদের কাছ থেকে তাদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়া হয়। একই সাথে অন্য প্রজাতি এবং নিজস্ব প্রজাতির সাথে আন্ত:সম্পর্কও ব্যাহত হয়। অন্যদিকে, আরেকদল মনে করেন চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের জীবন আরও উন্নত ও সুরক্ষিত হয়ে উঠে।
ব্যাপক হারে প্রাণী বৈচিত্র্য বিলুপ্ত হওয়ার পেছনে প্রতিকূল পরিবেশকে দায়ী করেছেন স্যার এটেনবার্গ। তিনি বলেন, বন্য পরিবেশেও প্রাণীদের বিলুপ্তি ঘটছে। এর কারণ ওই পরিবেশে এমন কিছু ঘটছে, যা প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর ছিল। এটি হতে পারে প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট কারণেও। নিউজিল্যান্ডের অধিবাসীরা তাদের স্থানীয় প্রাণী বৈচিত্র্যকে সংরক্ষণের জন্য যে সকল উদ্যোগ নিয়েছে তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি।
মানুষ প্রকৃতিকে বশ করতে গিয়ে যা ক্ষতিসাধন করেছে তা পূরণ করা সহজসাধ্য বিষয় নয়। চিড়িয়াখানা ও একুরিয়ামের প্রাণী সংরক্ষণ পদ্ধতি এই ক্ষতিপূরণকে অনেকটা সহজ করে তোলে বলে মনে করেন তিনি। পাশপাশি আরবের বিশেষ প্রজাতির হরিণের ঘটনাটি তুলে ধরেন এটেনবার্গ। এই প্রজাতিটি যখন বিলুপ্তির মুখে ছিল তখন আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে ব্যক্তিগত প্রাণী সংগ্রাহক ও চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসেন। তাদের সংরক্ষিত হরিণগুলো একত্রিত করে বংশবৃদ্ধি করা হয়। যখন এরা সংখ্যায় যথেষ্ট বেড়ে যায়, আবার তাদের বন্য পরিবেশে ছেড়ে দেয়া হয়।
বানর, কাঠবেড়ালি বা সামুদ্রিক প্রাণীদের যেভাবে আবদ্ধ করে সংরক্ষণ করা যায়, ঈগলের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। আবদ্ধ অবস্থায় প্রাণী সংরক্ষণ মূলত: নির্ভর করে প্রাণীর স্বভাব এবং দৈহিক আকারের উপর। সকল প্রাণী একই ভাবে নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। তাই সব প্রাণীকে একইভাবে বিশ্লেষণ না করতেও জোর দেন স্যার এটেনবার্গ।
মানুষ যতক্ষণ প্রাণীদের স্বচক্ষে জীবিত দেখতে পাবে না, তাদের জীবনকে বুঝবে না, তাদের হুঙ্কার শুনে বুঝবে না তারা প্রকৃতির কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ অংশ ততক্ষণ পর্যন্ত এই সংরক্ষণ প্রক্রিয়াগুলো ব্যর্থ। পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যেখানে প্রাণের অস্তিত্ব বিদ্যমান, সেখানে একদল প্রাণী অন্য প্রাণীদের ধ্বংস প্রকিয়া চালিয়ে যায় তাহলে অল্প সময়ে মানবপ্রজাতিই ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। এটেনবার্গ তাঁর নতুন ডকুমেন্টারি সিরিজেও ব্যক্ত করেছেন কীভাবে চিড়িয়াখানা ও একুরিয়াম প্রাণ-বৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখছে।