প্রথম বলী হবে কাশ্মীরের নদী-প্রকৃতি

ছবি: সংগৃহীত

জওহারলাল নেহরু বলেছিলেন, কাশ্মীরের নাম শুনলে যেসব দৃশ্য তার চোখে ভাসে, তার একটি ‘বুদবুদ তুলে কলকল করে ছুটে চলা স্রোতস্বিনী’। আমারও চমৎকার নদীগুলোর কথা মনে পড়ছে। কাশ্মীর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কল্লোল ও বুদবুদ দেখে।

আমরা পছন্দ করি বা না করি, কাশ্মীর এখন ‘সীলড, প্যাকড অ্যান্ড ডেলিভারড’। ঠিক কুর্দিস্তানের মতো। আলাদা ভাষা, সংস্কৃতি, ভূগোল, পতাকা থাকা সত্তেও কুর্দিস্তানকে চারটি দেশ পিঠার মতো ভাগ করে নিয়েছে; ইরান, ইরাক, তুরস্ক ও সিরিয়া। প্রত্যেক দেশই নিজের দখলদারিত্ব চেপে গিয়ে অপর দেশের প্রতি আঙ্গুল তোলে। পরের দেশে থাকা কুর্দিদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে উস্কানি দেয়।

কাশ্মীর ইতিমধ্যে তিন ভাগের পিঠা। পশ্চিমভাগ পাকিস্তানের দখলে, পূর্বভাগ ভারতের দখলে, উত্তরাংশ দখল করে বেইজিং তার নাম দিয়েছে ‘আকসাই চীন’। আমরা যখন কাশ্মীরীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের কথা বলি, তখন কোন কাশ্মীরের কথা বলি?

স্বতন্ত্র ও অখণ্ড কাশ্মির এখন অতীত। বরং আগামী দিনগুলোতে কুর্দিদের মতো কাশ্মীরিদেরও এই তিন দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো শুরু করতে পারে। এমনকি পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে স্বাধীনতার দাবি উঠলেও অবাক হবো না। অখণ্ড কাশ্মীর ও তার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এক সিন্ধু বেদনার নাম হতে পারে, বাস্তবতা কদাচ নহে।

আমার বাড়তি বেদনা কাশ্মীরের কল্লোলিনী নদীগুলোর জন্য। সিন্ধু, বিতস্তা, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী, বিপাশা, শতদ্রু নামের চমৎকার নদীগুলোর জন্য। ভারতশাসিত কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ হওয়ার ফলে সীমান্তের দুই পাশ থেকে পরস্পরকে শায়েস্তা করার প্রবণতা আরও বাড়বে।

আমার আশঙ্কা, এই অকাজ শুরু হবে নদীগুলোতে পানি আটকানো বা প্রবাহ বিকৃতির মধ্য দিয়ে। নয়াদিল্লী সেখানে যে ‘উন্নয়ন প্যাকেজ’ নিয়ে যাবে, বলাবাহুল্য তারও প্রথম বলী হবে নদী ও প্রকৃতি।

লেখক: সাংবাদিক ও নদী বিষয়ক সংগঠক, বাংলাদেশ

***প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বেঙ্গল ডিসকাভার কর্তৃপক্ষ লেখকের মতামতের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।