দেখতে অনেকটাই বিষহীন অজগরের মতো। কিন্তু সাপটি বিশ্বের অন্যতম বিষাক্ত সাপ রাসেল ভাইপার। এটি বাংলাদেশে চন্দ্রবোড়া নামেও পরিচিত। মূলত ভারতে বেশি দেখা মিলে এই সাপ। তবে হঠাৎ করেই সাপটি কম দেখা যেতে থাকে। প্রাণীবিদেরাও বিলুপ্তির খাতায় নাম লিখেন চন্দ্রবোড়া সাপের।
কিন্তু ২৫ বছর পর আবারো বাংলাদেশে দেখা মিলতে শুরু করেছে বিষধর সাপটি। যা ইতিবাচক বলে মনে করছেন বন্যপ্রাণী গবেষকরা।গবেষকরা জানান, এক সময় নানা কারণে বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়েছিল সাপটি। রাসেল ভাইপার সাপ বিশ্বে বিষাক্ত সাপের মধ্যে পাঁচ নম্বরে আছে।
২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা-আইইউসিএন এর রেড লিস্টেও তা প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চল তথা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় বেশ দেখা মিলতো এই জাতের সাপের। আর এই সাপ নিয়ে আতঙ্ক ছিল কৃষকদেরও। মূলত নদীর চর, আবাদি জমি ও বালু এলাকায় এরা বেশি বিচরণ করে।
বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ বলেন, এই সাপের শরীরের সাথে বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটির মিল রয়েছে। যেটিকে ক্যামোফ্ল্যাক্স বলা হয়। অর্থ্যাৎ সাপটি শিকারকে ধরতে শরীরে এই ক্যামোফ্ল্যাক্সকে কাজে লাগাতে পারে।
এদিকে গেল নভেম্বরে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় একটি রাসেল ভাইপার উদ্ধার করে বন বিভাগ। আর এই অঞ্চলে বিচরণ করা সাপ না হওয়াতে সাপটি নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। তবে বন কর্মকর্তারা বলছেন, বিলুপ্ত প্রায় সাপটি দেখা মিলেছে দেশের ১৯ জেলায়।
বন বিভাগের পরিদর্শক অসীম মল্লিক বলেন, হয়তো এখনকার বরেন্দ্র অঞ্চলের এখনকার আবহাওয়া রাসেল রাসেল ভাইপার সাপের সহায়ক রয়েছে। তাই সাপটির বংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সাপটি অন্য অঞ্চলে দেখা যাওয়াটা অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন এই বন কর্মকর্তা।
গবেষকরা জানান, রাসেল ভাইপারের কামড়ে বেশি আক্রান্ত হয় কৃষকেরা। এই সাপের বিষ হেমোটক্সিন হওয়াতে মাংস পঁচেই মারা যায় আক্রান্ত ব্যক্তি। পাশাপাশি ব্যয়বহুল চিকিৎসার বিষয়টি তো রয়েছেই।
বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ বলেন, মানুষ ও সাপের সহবস্থান জরুরি। কেননা সাপ টিকে থাকলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা পাবে। তিনি বলেন, সাপ কৃষকের বন্ধু, কারণ ফসল নষ্টকারী ইঁদুর খেয়ে সাপ প্রকৃতিতে ভারসাম্য রক্ষা করে।
রাসেল ভাইপার সাপ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে পরামর্শ দিয়েছেন সরীসৃপ গবেষক আদনান আজাদ আসিফ। সাপের কামড় থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনে কৃষকেরা গামবুট ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশ রাসেল ভাইপার সাপ টিকে থাকার জন্য উপযোগী বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। তারা বলছেন, প্রতিবেশের জন্যও সাপটি সংরক্ষণ করা দরকার।