ভালো নেই ফেনী নদী, স্থানীয়দের আকুতি!

বাংলাদেশের ফেনী নদীতে বালু উত্তোলনের চিত্র। ছবি: বেঙ্গল ডিসকাভার

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের মীরসরাই উপজেলার ফেনী নদী অংশে নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে বালু উত্তোলনের কারণে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। ইজারাবিহীন নদী এলাকা থেকে বালু তোলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদী তীরের জীব-বৈচিত্র ও মানুষ। অনেক অভিযোগ-প্রতিবাদের পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ না নেয়ার অভিযোগ স্থানীয়দের।

জানা গেছে, উপজেলাটির ১নং করেরহাট ইউনিয়ন এবং ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়ন এলাকায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি মহল। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙছে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের বারবার অবগত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এছাড়া বালু তোলার প্রতিবাদে ইতিমধ্যে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছেন স্থানীয়রা। লিখিত অভিযোগও জানানো হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের কাছে। দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলনের প্রায় ২০০ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। নতুন নতুন এলাকাও এখন ভাঙনের মুখে। এতে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে নদীর পাড়ের জনবসতি।

মধ্যম আজম নগর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা পারভেজ হোসেন বলেন, এখানে সরু খাল ছিলো, সেটা দিয়ে আমরা ছোটবেলায় সাঁতার কাটতাম। কিন্তু ফেনী নদীর মোহনা ৮০-৯০ ফুট নদীর গভীরে বালু উত্তোলনের কারণে সরু খালটির পাড় ভেঙ্গে বিলীন হয়েছে। ফসলি জমিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

বৃহত্তর ফেনী নদী বালু ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি সোনা মিয়া বলেন, “মীরসরাই ফেনী নদীর অংশে ৪টি বৈধ ইজারাদার আছে। সরকারী নিয়ম ভেঙ্গে কেউ যদি বালু উত্তোলন করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার।”

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়নের ফেনী নদীর পশ্চিম জোয়ার, কাটাগাং এবং ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়নের মধ্যম আজম নগর এলাকায় হিঙ্গুলী খালের মুখে ট্রলারে কাটা ড্রেজার দিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। স্থানীয়রা জানান, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। তাই অনেকক্ষেত্রেই প্রতিবাদের সাহস পান না তারা।

এদিকে ২০১০ সালের বালুমহল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা-বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এছাড়া সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ।

জানা গেছে, উন্নতমানের বালু সরবরাহের উৎস হিসেবে পরিচিত ফেনী নদীর বালুমহালগুলো। নদীর দুইপাড়ে অবস্থিত বালুমহালগুলো থেকে বালু উত্তোলনে ইজারা দিয়ে থাকে ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এজন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে বালুমহালগুলো থেকে বালু উত্তোলনের সীমানাও নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু বালু ব্যবসায়ীরা এ নিয়ম তোয়াক্কা না করার অভিযোগ উঠেছে।

“আমরা সরকারী নিয়ন-কানুন মেনে নদী মাঝ খান থেকে বালু উত্তোলন করার জন্য নির্দেশ দিয়ে থাকি। কেউ যদি সে নির্দেশ অমান্য করে বালু উত্তোলন করলে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব,” বলেন ১নং করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন।

অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, “ইতিমধ্যে বালু মহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে কয়েকজনকে জরিমানা করেছি। অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে।”