ঈদ, পূজো বা অন্য যেকোন ছুটিতে বাড়ি বা কোথাও বেড়াতে যেতে অনেকেই পোষা প্রাণীটিকেও সঙ্গে নিতে চান। কিন্তু নিয়ম-কানুন জানা না থাকার কারণে বিড়ম্বনায় পড়েন অনেকেই। তাই জেনে নিন করণীয়গুলো।
শুরুতে যে কাজটি করতে হবে, তা হলো প্রাণী চিকিৎসকের কাছ থেকে নিতে হবে স্বাস্থ্যগত পরীক্ষার ছাড়পত্র। এবং যাত্রার দিন তা অবশ্যই সঙ্গে নিতে হবে। তবে প্রাণীটি অসুস্থ থাকলে সেক্ষেত্রে সঙ্গি না করাই উত্তম।
আকাশ, রেল, সড়ক বা নৌ যে পথেই যাত্রা করবেন, সংশ্লিষ্ট পরিবহণকে তা আগেই জানিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের ছাড়পত্র এবং নিরাপত্তায় খাঁচা বা বাক্সে রাখার বিষয়টিও অবগত করতে হবে।
ছুটিতে পোষা প্রাণী নিয়ে ভ্রমণ করেন সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন।
নিজ অভিজ্ঞতা জানিয়ে বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন, “প্রচন্ড গরমে ওদের খুব কষ্ট হয়। তাই ট্রেনে এসি কম্পার্টমেন্টের টিকিট কাটাই শ্রেয়। তবে সম্ভব না হলে সঙ্গে ঠান্ডা পানি রাখতে হবে। একটু পর পর ঠান্ডা পানির ছিটা দিলে, মুখ মুছিয়ে দিলে গরম কম লাগে ওদের।”
তিনি বলেন, “আর আমি অন্তত একটি ঠান্ডা পানির বোতল ওদের কোলবালিস হিসেবে দিয়ে দেই। এতে পেটে ঠান্ডা থাকে বলে আরাম পায়। নিচে পায়ের কাছে রাখা উচিত না। কোলে রাখলে বাতাস পায়, আরামে থাকে।”
“যাত্রার অভ্যাস না থাকলে অবশ্যই ক্যাট/ডগ বেল্ট পড়িয়ে রাখতে হবে। সঙ্গে ডগ/ক্যাটফুড রাখা ভাল। যাত্রাকালীন সময়ে সাধারণ খাবার খেতে চায় না ওরা,” উল্লেখ করেন নাদিয়া শারমিন।
যেভাবে পরিবহণ করা যায়:
যাত্রার সময় বিড়াল/কুকুর সঙ্গে রাখতে পারেন। রেলে যাত্রা করলে নিজ কম্পার্টমেন্টেই রাখতে হবে পোষা প্রাণীকে। সঙ্গে রাখতে হবে ভ্যাক্সিনের কার্ড।
পোষা প্রাণী পরিবহণের ক্ষেত্রে অন্য যাত্রীদের যেন অসুবিধা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সহযাত্রীদের সম্মতিরও দরকার হয়।
প্রাণী কল্যাণ সংগঠন ‘প’ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান এমিল বলেন, পোষা প্রাণী পরিবহণে কোন বাঁধা নেই বাংলাদেশে। তবে গণপরিবহণে যাতায়াতে প্রাণীদের কষ্ট হয় বেশ। বিড়াল পরিবহণে অন্ধকার করে নেয়া উচিত, যাতে বাহিরের বেশি তথ্য না পায়। মাঝে মাঝে ওদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, যাতে বুঝতে পারে অভিভাবক সঙ্গেই আছে।
“তবে কুকুরকে নিজস্ব পরিবহণ ছাড়া যাত্রায় না নেয়াই উত্তম। কারণ যদি বেশি মানুষ দেখার অভ্যাস না থাকে, তবে ওরা খুব স্ট্রেসড হয়ে যায়,” বেঙ্গল ডিসকাভার-কে বলেন রাকিবুল হাসান এমিল।
ট্রেনে ভ্রমণের উপায়:
যদি কুকুকে ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে রাখতে চান তাহলে শুধু ফার্স্ট ক্লাস এসিতে টিকিট কাটতে হবে। কম্পার্টমেন্টের দু’চারটি বার্থ আরো বুক করতে হতে পারে ব্যবহারের জন্য।
যদি এসি স্লিপার কোচ, এসি চেয়ার কার বা সেকেন্ড ক্লাস কোচে যাত্রা করেন, তাহলে কুকুর নিয়ে যেতে পারবেন না।
তবে কুকুরটি যদি কোন অন্ধ মানুষের চোখের কাজ করে তাহলে অনুমতি সাপেক্ষে নিজ কম্পার্টমেন্টে রাখা যাবে।
আর যাত্রার সময় কুকুরের গলায় কলার এবং চেন অবশ্যই থাকতে হবে। যাত্রাকালীন পোষা প্রাণীর খাবার এবং পানি সরবরাহ করা মালিকের দায়িত্ব।
পোষা প্রাণীর মাধ্যমে কোন নিয়মের লঙ্ঘন যাতে না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
অন্যান্য পরিবহণ:
লঞ্চে পরিবহণের ক্ষেত্রে কেবিন নিতে হবে। এজন্য আলাদা কোন ভাড়ার প্রয়োজন হয় না। তবে অন্যান্য নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় উপরোক্ত বিষয়গুলো নজর দিতে হবে।
এছাড়া বাসে পরিবহণের ক্ষেত্রে খাঁচা বা বাক্সে নিতে হয় পোষা প্রাণী। এজন্য দু’জনের সিটের ভাড়া দিতে হয়। তবে সহযাত্রীদের অনুমতির প্রয়োজন হয় এতে। এজন্য টিকিট কেনার পূর্বেই পরিবহণ কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে হয় বিষয়টি।