শত শত বন্যহাতির মৃত্যু, মহামারীর আশঙ্কা! (ভিডিও)

গেল দু’মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানায় রহস্যজনক মারা গেছে সাড়ে তিনশো’র বেশি হাতি। উত্তর বতসোয়ানার ওকাভাঙ্গো ব-দ্বীপে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম- বিবিসি। সংবাদে হাতি মৃত্যুর কারণ নিয়ে দেশটির সরকার কিছুই জানে না বলে উল্লেখ করে বিবিসি।

হাতিগুলো মারা যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, হাতিগুলোর সঙ্গে আসলে কী হয়েছিল তা জানতে আরো কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে বলে জানিয়েছে বতসোয়ানা সরকার। আফ্রিকার মহাদেশের বিচরণ করা বন্য হাতির এক-তৃতীয়াংশ বসবাস করে বতসোয়ানায়। এ বছরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে হাতিগুলো মারা যাওয়ার খবর প্রকাশ পায়।

স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণবাদীরা ব-দ্বীপটিতে বিমান ভ্রমণের সময় হাতির মরদেহ দেখতে পায় বলে বিবিসিকে জানায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল পার্ক রেসকিউর কর্মকর্তা নিয়াল ম্যাককান। তাৎক্ষণিক বিষয়টি দেশটির সরকারকে অবগত করা হয় বলেও দাবি করেন ম্যাককার। জানান, ওই সময় ১৬৯টি হাতির মরদেহ দেখতে পান তারা।

নিয়াল ম্যাককান জানান, এপ্রিল মাসে তদন্ত করে আরো বেশকিছু হাতির মরদেহের খোঁজ পাওয়া যায়। মোট মৃতের সংখ্যা সাড়ে তিনশোর বেশি। খরা বাদে অন্য কোন কারণে এতো হাতি মারা যাওয়ার কারণ দেখছেন না বলেও জানান তিনি। তবে হাতিগুলোকে বন্যপ্রাণী শিকারিরা হত্যা করেছে কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিজ্ঞান পত্রিকা ফিজিক্স ডট ওআরজির বরাত দিয়ে দেশটির সরকার বলেছে, হাতিগুলোর মৃত্যুর পেছনে শিকারিদের কোন হাত না থাকার সম্ভাবনা বেশি। কেননা মৃত হাতিগুলোর দাঁত অক্ষত আছে। সরকারের সঙ্গে একমত পোষণ করে নিয়াল ম্যাককান জানান, সেখানে শুধুমাত্র হাতির মৃতদেহ পাওয়া গেছে, অন্য কোন প্রাণীর মরদেহ পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, যদি শিকারিরা সায়ানিড বিষ প্রয়োগ করে হাতিগুলো হত্যা করতো তবে অন্য প্রাণীরাও মারা যেতো। গত বছর অ্যানথ্রাক্স বিষক্রিয়ায় বতসোয়ানায় একশো’র বেশি হাতি মারা গিয়েছিল। তবে এবারের হাতিগুলো অ্যানথ্রাক্স বিষক্রিয়াতেও মারা যায়নি বলেও উল্লেখ করেন ম্যাককান।

হাতি মারা যাওয়ার ধরণ দেখে ম্যাককান বলেন, হাতিগুলো সম্ভবত স্নায়ুবিক প্রক্রিয়া কোনো ধরণের আক্রমণের শিকার হয়েছে। ঘটনাস্থলে মৃত হাতিগুলোকে মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে দেখা গেছে। অন্যগুলোকে চক্রাকারে ঘুরতে দেখা গেছে। বিপুল পরিমাণ হাতির মৃত্যুকে পরিবেশগত বিপর্যয় হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি। যা এক সময়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক দুর্যোগে রূপান্তর হওয়ার আশঙ্কাও করছেন ম্যাককান।

ম্যাককানের ধারণা, মাটি থেকে কিংবা পানির উৎস থেকে বিষক্রিয়া থেকেও হতে পারে। আবার মানুষের মধ্যে সংক্রামিত কোন রোগের কারণে হতে পারে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ প্রাণীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে বলে আশংকা তার।

দেশটির বন্যপ্রাণী ও জাতীয় উদ্যান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালল ড. সিরিল টালো ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান-কে বলেন, এখন পর্যন্ত ২৮০টি হাতির মৃতদেহ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি। বাকি মৃতদেহ সনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে কীভাবে প্রাণিগুলো মারা গেছে, তা জানা যায়নি। আমরা মরদেহগুলো পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রেরণ করেছি। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফলাফলের প্রত্যাশা করছি।