বজ্রপাত প্রকৃতির অপার বিস্ময়। বছরে বজ্রপাতের কারণে অনেক মানুষ প্রাণ হারায়। ২০১৮ সালে ৩১ অক্টোবর বৃহৎ একটি বজ্রপাত প্রত্যক্ষ করে আফ্রিকার দেশ ব্রাজিল। ওই সময় দেশটির দক্ষিণাংশে ৭০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বজ্রপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। যেটিকে বিশ্বের দীর্ঘতম বজ্রপাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থাগুলো।
বিশ্বে বজ্রপাতের কারণে বছরে বহু মানুষ নিহত হয়। দুর্যোগটিকে প্রকৃতির জন্য বড় বিপদ বলছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা- (ডাব্লিউএমও)। ভৌগলিক কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতে বজ্রপাতের কারণে সবচেয়ে বেশী মানুষ মারা যায়।
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে, ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বজ্রপাতের কারণে ১৪’শ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এমন বাস্তবতায় ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি ভারতের বিহার রাজ্যে বজ্রপাতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে বিশ্বের দীর্ঘ বজ্রপাতের ঘটনাগুলো ঘটেছে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে।
সম্প্রতি ডাব্লিউএমও জানায়, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ব্রাজিলের দক্ষিণে দেখা যাওয়া বজ্রপাতটির দৈর্ঘ্য ছিল ৪৪০ মাইল বা ৭০৯ কিলোমিটার। দীর্ঘতম বজ্রপাতের বিশ্বরেকর্ড পাওয়া বজ্রপাতটির দূরত্ব পরিমাপ করে আবহাওয়াবিদরা।
গবেষকরা জানান, দৈর্ঘ্য পরিমাপে এটি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে প্রায় বোস্টন পর্যন্ত দীর্ঘ ছিলো। বজ্রপাতের আলোকচ্ছটার স্থায়ীত্বের ভিত্তিতে আরেকটি রেকর্ড আছে, তা হচ্ছে ১৬ দশমিক ৭৩ সেকেন্ডের। ২০১৯ সালের ৪ মার্চ উত্তর আর্জেন্টিনায় সেটির দেখা মেলে।
ডব্লিউএমও’র আবহাওয়া ও জলবায়ুবিদদের প্রধান অধ্যাপক র্যান্ডল কারভেনি বলেছেন, প্রযুক্তিগত আরো উন্নয়ন হলে প্রকৃতির আরো বিরূপ আচরণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। জানা যাবে প্রকৃতি আর কী করতে পারে। বজ্রপাত সনাক্তকরণ প্রযুক্তির উন্নতি ঘটলে, এ ধরণের ঘটনা কিংবা এরচেয়েও বড় ধরণের বজ্রপাতের ঘটনা সম্পর্কে জানা যাবে।”
অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট লাইটিং চিত্র-সংক্রান্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার বৃহৎ দুটি বজ্রপাতের ঘটনা সম্পর্কে জানা গেছে। এর আগে দীর্ঘতম বজ্রপাতের রেকর্ডটি ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহামা প্রদেশে ৩২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বজ্রপাতের দেখা মেলে।আর স্থায়ীত্বের ভিত্তিতে দীর্ঘ সময়ের বজ্রপাতের দ্বিতীয় রেকর্ডটি ফ্রান্সের,” উল্লেখ করেন র্যান্ডল কারভেনি।
২০১০ সালের ৩০ অগাষ্ট ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে দেখা মেলে ৭ দশমিক ৭৪ সেকন্ড দীর্ঘ বজ্রপাত। ভূমিতে বসানো বজ্র পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে রেকর্ডগুলোর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল। বজ্রপাতের রেকর্ডগুলো নিয়ে আমেরিকান জিওফিজিকাল ইউনিয়নে গবেষণা প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে। বজ্রপাতকে কঠিন দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করছে ডাব্লিউএমও। আমেরিকার আবহাওয়া দফতর বলছে, বজ্রপাতের কারণে দেশটিতে বছরে বিশজন নিহত ও আহত হয় শতাধিক মানুষ।