
দক্ষিণ আফ্রিকার জঙ্গলে শিকারের উদ্দেশ্যে গিয়ে একটি সিংহকে গুলি করে হত্যা করেছে কানাডিয়ান দম্পতি। এরপর পৈশাচিক উল্লেসে মেতে উঠে ডরেন কার্টার ও ক্যারোলিন কার্টার নামের ওই দম্পতি। শিকারের ছবি পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।যা ভাইরাল হয়ে বিশ্বব্যাপী চলছে সমালোচনা।
গতকাল মঙ্গলবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্যা সান-এর এক সংবাদে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকার জঙ্গলে লাগিলেলা সাফারি নামক একটি দলের সঙ্গে শিকার অভিযানে যান গিয়েছিল ডরেন কার্টার ও ক্যারোলিন কার্টার দম্পতি।
সেই সময় গুলি করে হত্যা হয় সিংহটিকে। শিকার করার আনন্দে সিংহটির পাশে বসেই পোজ দিয়ে চুম্বন করেন ওই দম্পতি।
পরে লাগিলেলা সাফারি নামের শিকারি দলটির ফেসবুক পেজে ছবিটি পোস্ট করে। এতেই ছবিটি ভাইরাল হতে বেশি সময় লাগেনি। দম্পতির নিষ্ঠুরতা দেখে নিন্দায় সরব নেটিজেনরা।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভেট করে দেয় লাগিলেলা সাফারি। তবে ততক্ষণে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় নিষ্ঠুরতার ছবিটি।

জানা গেছে, কানাডায় ট্যাক্সিডার্মি-এর ব্যবসা করেন এই দম্পতি। বিভিন্ন মৃত প্রাণীর দেহকে বিশেষ পদ্ধতিতে অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ করাকে ট্যাক্সিডার্মি বলে।
বিশ্বজুড়ে চোরাবাজারে বিপুল দামে বিক্রি হয় এই মৃত প্রাণীর দেহগুলো। সেই টাকার লোভেই কি মনুষ্যত্ব লোপ পাচ্ছে কিনা-এমন প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনদের।
কানাডিয়ান ওই দম্পতি অবশ্য নির্বিকার। পুরোটাই রাজনীতি চলছে, দাবি ডরেনের।
আন্তর্জাতিক বনপ্রাণী সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ এডুয়ার্ডো গনক্লেভস বলেন, সাফারিতে গিয়ে জিপের মাথায় বসে গুলি করে সিংহ মারার মধ্যে কোনও বীরত্ব নেই। “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই সিংহগুলি মানুষ দেখে অভ্যস্ত হয়।
এভাবে শিকার করা চিড়িয়াখানার খাঁচা-বন্দি সিংহ মারারই সমান” উল্লেখ করেন তিনি। এই হারে সিংহ কমতে থাকলে আগামীতে আফ্রিকা জঙ্গলের রাজা হারাবে বলে মন্তব্য করেন বিশ্লেষকরা।

ট্রফি হান্টিং বা বন্যপ্রাণী হত্যা করে দেহাংশ নিয়ে ফিরে আসা ব্রিটেনের অন্যতম সমস্যা। বহু যুগ ধরেই বাঘ, ভল্লুক, সিংহ বা বলগা হরিণ হত্যা করে অবিকৃত অবস্থায় মাথা নিয়ে সংরক্ষণ করে সৌখিন শিকারিরা।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই বিত্তশালীরা শখের বশে মৃত প্রাণীদের দেহাংশ সংগ্রহ করে। চোরাবাজারে কোটি টাকায় বিক্রি হয় আফ্রিকান সিংহের দেহ।
ঘর সাজানোর উপাদানের মতো দেয়ালে টাঙানো হয় বন্যপ্রাণীর মাথা। বীরত্বের নিদর্শন হিসেবে গর্বের সঙ্গে এগুলো দিয়ে ঘর সাজান বিত্তশালীদের একাংশ।
এর আগে ২০১৫ মালে এক মার্কিন দাঁতের চিকিৎসক জিম্বাবুয়েতে সিংহ হত্যা করে পাশে দাঁড়িয়ে ছবি পোস্ট করেন ফেসবুকে। এরপর তুমুল প্রতিবাদের ঝড় ওঠে বিশ্বব্যাপী।
কিন্তু প্রতিবাদই করেই দায় সাড়ছে সকলেই। বাড়েনি সচেতনতা বা নেয়া হয়নি আইনগত ব্যবস্থা। তাই তো গেলো ২০ বছরে আফ্রিকায় ৪০ শতাংশ কমেছে সিংহের সংখ্যা, যা সংখ্যায় প্রায় ২০ হাজার।